চৈত্রমাস চললেও সূর্যের নেই রাগী রাগী বৈরী আবহাওয়া। আষাঢ় মাসের মতো মেঘলা আকাশ, কখনো বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, কখনো বা মুষলধারে। এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে মা অনামিকাকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেন।
অনামিকা বাইরে যেতে পারে না, মাঠে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলতে পারে না। এতে তার মন খুব খারাপ হয় । সে যায় দাদুর কাছে।
দাদু ও দাদু?
সবেমাত্র নামাজ শেষ করেছেন দাদু। হাতে এখনো তাসবিহ, মাথায় টুপি। দিদিভাইকে দেখে হেসে বললেন, কিছু বলবে?
হ্যাঁ দাদু।
বলো।’
তোমাদের সময় তোমরা যখন ছোট্ট ছিলে, তখন কি আকাশ চৈত্রমাসে এমন মেঘলা থাকত, বৃষ্টি পড়ত?
না রে, আমরা যখন ছোট্ট ছিলাম, তখন চৈত্রমাসে খুব রোদ পড়ত। রোদের তাপে মাটি পুড়ে গরম হয়ে যেত, ছাতা আর পায়ে জুতা ছাড়া বাইরে বের হওয়া যেত না। আমরা বের হতাম সন্ধ্যার দিকে। মাঠে গিয়ে খেলতাম গোল্লাছুট, কানামাছি, ডাংগুলি।
দাদুর কথা শুনে অনামিকার মন আরো খারাপ হয়ে যায়। রাগ উঠে আকাশের প্রতি। বৈরী আবহাওয়া হওয়ার আর কোনো সময় পেল না? ঠিক আমাদের খেলার সময় বৃষ্টি ঝরাতে হবে?
রাগে গাল ফুলায় সে। গাল ফুলিয়ে বারান্দায় চুপচাপ বসে থাকে। বাইরে মাঝারি ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ছে। বসে বসে বৃষ্টি দেখছিল সে। হঠাৎ তার কানে চিকন সুরে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। কান খাড়া করে ভালোভাবে কান্নার আওয়াজ শুনার চেষ্টা করে সে।
হ্যাঁ ঠিকই তো, সত্যি, সত্যিই কে যেন কাঁদছে। কে কাঁদছে, কে? চারপাশে তাকায় সে। চোখ পড়ে জাম্বুরা গাছের নিচে । জাম্বুরা গাছের নিচে হলুদ রঙের ছোট কী যেন একটা দাঁড়িয়ে আছে। তার পুতুলটার মতো উচ্চতা হবে।
ভাইয়া চীনে থাকে। চীন থেকে তার জন্য ওই পুতুলটা পাঠিয়েছে। পুতুলটা কথা বলতে পারে । হাসতে পারে। কাঁদতেও পারে। অবসর সময়ে পুতুলটার সঙ্গে খেলা করে সে।
ওটা কি কোনো পুতুল নাকি? জাম্বুরা গাছের নিচে পুতুল এলো কী করে?’ গালে হাত দিয়ে ভাবে অনামিকা ।
পুতুলটা আরো জোরে কাঁদছে ।
বৃষ্টি পড়ছে । এখন কী করে গাছের কাছে যাওয়া যায়? ভাবে অনামিকা। হঠাৎ তার মনে পড়ে তার তো একটা ছাতা আছে। হলুদ রঙের ছাতা। ভাইয়া যখন পুতুলটা পাঠিয়েছিল তার সঙ্গেই ছিল ছাতাটা। হয়তো পুতুলের সাথে উপহার ছিল। দৌড়ে ঘরে যায় সে। ঘর থেকে ছাতা বের করে গাছের কাছে আসে।
পুতুলটাকে প্রশ্ন করে, কে গো তুমি? পুতুল?
না, আমি এলিয়েন।
তুমি এলিয়েন! বিস্ময়ে বলল অনামিকা।
হ্যাঁ, এলিয়েন।
এলিয়েনদের কথা ভাইয়ার কাছে অনেক শুনেছে সে। ভাইয়া সায়েন্স ফিকশন পড়ে তাকে এলিয়েনদের অনেক গল্প বলতো। সে বলত এলিয়েনরা পৃথিবীর শত্রু। পৃথিবীকে নিজের আয়ত্তে নেয়ার জন্য তারা পৃথিবীবাসীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু সত্যি সত্যি যে এলিয়েন আছে, সেটা জানতো না সে। আজ এলিয়েন দেখে সে যেমন অবাক হলো, তেমনি ভয়ও পেল খুব।
আশ্চর্যন্বিত হয়ে বললো, তুমি কোথা থেকে এসেছ, এলিয়েন?
সব বলব। তার আগে তুমি আমাকে তোমার ছাতার নিচে আশ্রয় দাও। বৃষ্টি আমাদের চরম শত্রু। শরীরে বৃষ্টি পড়লে আমাদের খুব কষ্ট হয়।
অনামিকা তাড়াতাড়ি এলিয়েনকে কোলে তুলে নিলো। ঘরে এনে শরীরের পানি ভালো করে মুছে দিলো।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। বললো এলিয়েন। তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছ।
অনামিকা বললো, তোমাকেও ধন্যবাদ। এবার বলো এলিয়েন, তুমি কোথা থেকে এসেছ? নিশ্চয় তুমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছ?
তুমি এসব কি বলছ বন্ধু? আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসব কেন? হলুদ এলিয়েন কোনো দিন কারো কোনো ক্ষতি করে না। তোমাদের পৃথিবী আমার খুব ভালো লাগে। তাই প্রতি বছর এই সময়ে আমি পৃথিবীতে ঘুরতে আসি। এই সময়ে আকাশ স্বচ্ছ-পরিষ্কার থাকে। কিন্তু এবার এসে দেখছি বৈরী আবহাওয়া। দুপুরের রোদের বিপরীতে প্রতিদিন বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির কারণে আমি আমার গ্রহে ফিরে যেতে পারছি না।
দ্বিতীয় পার্ট পড়ুনঃ ছোটদের শিক্ষামুলক গল্প এলিয়েন বন্ধু পার্ট ২