আমার একটা ভূত আছে। সে আমার খুব ভালো বন্ধু । গতকাল রাতেও তো কথা হয়েছে। কথাটা যখনই আলমগীর বলল, তখনই আমরা যেন আকাশ থেকে পড়লাম। ক্লাসের সবাই আলমগীরের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । আলমগীর যেন একটা টেলিভিশন, সবাই তাকে দেখছে।
একটু আগে বাংলা প্রথম পত্র ক্লাস শেষ হয়েছে। খলিল স্যার আজ পড়িয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তৈলচিত্রের ভূত’। তিনি বাংলা পড়লেও বিজ্ঞানকে ভালোবাসেন। মাঝেমাঝে বাংলা ক্লাসেই বিজ্ঞানের আলোচনা করন। ক্লাস শেষে স্যার বলেছেন, ভূত বলে কিছু নেই। সবই কুসংস্কার। আমাদের আরও বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।
স্যার ক্লাস থেকে বের হওয়ার পরই আলমগীর দাঁড়িয়ে বলল এ কথা। তার কথায় ক্লাসের সবাই তাজ্জব বনে গেল। আমরা বললাম, কী বলিস এসব। আলমগীর বলল, ভূতটা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি চাইলে তোদের তা দেখাতেও পারি।
আমরা সকৌতূহলে জানতে চাইলাম, ভূতটা তোকে কী দিয়েছে।
আলমগীর জবাব দি- সে বলেছে যে কাউকে এ বিষয়ে বলা যাবে না। বললে ভূতটা নাকি খুব রাগ করবে ।
আমরা আলমগীরের কথাটা একদমই বিশ্বাস করলাম না। তার মাথায় একটু গণ্ডগোল আছে । শীতকালে স্কুলে আসা তার জন্য নিষেধ কারণ শীতকালে তার পাগলামিটা বেড়ে যায়।
গত শীতে হেডস্যারের দামি মোটরসাইকেলটা সে পুকুরে ফেলে দেয়। টয়লেটে গিয়ে করেছিল আরেক কাণ্ড। এখন শীতকাল এ জন্য মনে হয় তার মাথাটা একটু খারাপ । তাই আমরা কেউ তার কথাটা গুরুত্ব দিলাম না।
সে হঠাৎ বলে ফেলল, ভুতটা কিন্তু আমার সাথেই থাকে। যখন আমি ডাকব তখনই চলে আসবে। তোরা যদি বলিস তাহলে ডাকতে পারি । কি তোরা দেখবি নাকি?
আমরা চমকে উঠলাম। আমাদের মনে চাপা আতঙ্ক। সবার হৃৎপিণ্ড একটু বেশি করেই লাফাচ্ছে। ক্লাসের সবচেয়ে গুণ্ডা ছেলে জগলু বলল, এত তেড়িবেড়ি করতাছোস ক্যান? আমার সামনে বাহাদুরি করিস না। তোর পাগলামি আমি ছাড়াইয়া দিমু। জগলু আরেকটু চোখ বড় করে বলল, হে ভূত দেখছে। কত বড় কর্ম সাধন করছে।
আলমঙ্গীর শান্তভাবে বলল, আমার কাছে কিন্তু একটা পোষা সাপও আছে। গোখরা সাপ। এক কামড়েই খতম করে দেবে। তবে আমাকে কামড় দেয় না। আমার ব্যাগে সাপটা আছে। বের করব নাকি?’
ক্লাসের মেয়েরা চিৎকার করতে করতে বের হয়ে গেল। জগলু রাগে
আলমঙ্গীরের ব্যাগটা চেইন খুলে উপুড় করল । প্রথমে বইগুলো পড়ল । তারপর সত্যিই দুই হাত লম্বা একটা সাপ মেঝেতে পড়ল । ফণা তুলে ফস ফস করতে লাগল। কয়েকজন চেঁচামেচি শুরু করল ।
কয়েকটা মেয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিল। আর সাথে সাথেই ভয়ানক কাণ্ড । মেয়েদের চিৎকারে খলিল স্যার আসলেন। তিনিও ভীষণ ভিতু। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। বললেন, সাপ কোত্থেকে এলো?
আলমঙ্গীর বুকটা বুক ফুলিয়ে গর্বের সাথে বলল, স্যার, সাপটা আমার পোষা। আজকে ব্যাগে করে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু জগলু বের করে ফেলেছে। আমার কোনো দোষ নেই।
খলিল স্যার থ বনে গেলেন। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের ব্যাগে যে সাপ থাকতে পারে তা উনার কল্পনাতেও ছিল না। খলিল স্যার বললেন, তুমি কি সাপুড়ে? স্কুল ব্যাগে থাকবে বই, খাতা, কলম। কিন্তু সাপ কেন?
আলমঙ্গীর কোনো কথা খুঁজে পায় না। সে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর সাপটা আলঙ্গীরের পা বেয়ে শরীর পেরিয়ে গলায় এসে প্যাঁচ দিয়ে বসল। এই দৃশ্য দেখে সবার আক্কেল গুড়ুম হওয়ার মতো দশা ।
পরের দিন আলঙ্গীরের সাথে কেউ বসল না। সে একাই একটা বেঞ্চে বসেছে। খলিল স্যার ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের ওপর দশটা জ্ঞানমূলক প্রশ্ন দিলেন লিখতে।
তারপর গতকালের মতো বললেন, আমাদের বিজ্ঞানসম্মত ধারণা থাকতে হবে। তবেই আমরা এসব ভূত থেকে দূরে থাকতে পারব।
দ্বিতীয় পার্ট পড়ুনঃ চরম হাসির গল্প ক্লাস্রুমের ভূত পার্ট ২