প্রথম পার্ট পড়ুন: বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প অন্যরকম ভালোবাসা
দ্বিতীয় পার্ট পড়ুন: বাস্তব জীবনের ছোট গল্প অন্যরকম ভালোবাসা পার্ট ২
তোমরা দুটি মানব মানবী একটা জীবনে আবদ্ধ হয়ে আমাদেরকে এই পৃথিবীর জন্ম দিয়েছ । একজন সব দায় অন্ধ গলিতে জমা রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছে। আরেকজন বুকে যন্ত্রণার কান্না জমাতে জমাতে আমাদেরকে দিনের আলো চিনাতে ভুলে গেছে। সেই তুমি কেনো স্বপ্ন দেখবে মা?
তুমি জানো না স্বপ্ন দেখা আমাদের জন্য অপরাধ! তুমি ভুলে গেছো মা, আজ নয় তারিখ; বাবার আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন। কী করে মা এই দিনটি ভুলে যাও! আর কোনো দিন তমালের সাথে কথা বলবে না এবং তুমিও আমার মতো অনুভূতিশূন্য হয়ে যাবে। কেউ পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে খুকি বলে ডাকবে না।
রাহেলা বেগমের দুই চোখে অশ্রুর ঢেউ! বুকের ভিতর ২০ বছরের কান্নার নদী। সেখান থেকে প্রতি মুহূর্তে অশ্রুর ঝর্ণা বইতেই থাকে। ভেজা ভেজা চোখে হতাশার ক্ষত । এক মুহূর্তের জন্য আজ সন্ধ্যায় সেই ক্ষত আলোর পরশে জ্বলে উঠেছিল।
মা আমি ঘুমাতে চাই। তুমিও ঘুমাও। এত কান্নার কিছু নেই। শুধু স্বপ্ন দেখাটা ভুলে যাও মা। তাহলেই হবে! মাকে এক প্রকার জোর করে বের করে দিলো রাহনুমা ।
ও আজ সারারাত কাঁদবে। যে কান্নাটা একান্ত ওর। সে কান্নাটা আর কেউ দেখবে না। রাহনুমার বয়স তখন ৭/৮ বছর। রোজ রাতে ওদের ঘুম ভাঙতো এক দুইবার করে মায়ের কান্নার শব্দে। বাবার ছবি কল্পনা করলেই রাহনুমার চোখে ভাসে ভয়ঙ্কর কিছু রাত! দুখি চোখে মায়ের ভয় পাওয়া দিন।
মায়ের কাছে ও জেনেছিল, ওদের বাবা আগে এমন ছিলেন না। ভিন্ন এক নারী যখন থেকে জড়িয়ে গেছে ওদের বাবার জীবনে, তখন থেকেই বাবার রূপ পাল্টে যায় । ভীষণ রকম পাল্টে যায়। ের সাথে তাদের জীবনের গল্পও পালটে যায়।
রাহনুমার স্পষ্ট মনে আছে, বাবা যেদিন চলে গেল, বাহিরে তখন ফকফকে জোছনা। প্রকৃতি অন্য এক রূপ ধারন করেছিল। বাবা নিরুদ্দেশ আজ অব্দি। অবশ্য খোঁজ পেলেই বা কী হতো? চিরচেনা সব মুখগুলো বদলে গেছে।
তাদের বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প অনেকটা এরকম। খুলনা শহর ছেড়ে ওরা চলে এলো রাজধানীতে। শুরু হলো তিনটি জীবনের লড়াই। টগরের বয়স তখন কম। ৪ বা ৫ বছরের টগর খাবারের অভাব সয়ে হয়ে গেল নির্বাক একটা পুতুল। মায়ের উপর রাহনুমার কোনো অভিযোগ নেই। আছে মায়ের ভাগ্যের উপর অভিমান।
যতটা চেষ্টা করলে একজন মা সন্তানের সুখ কিনতে পারেন, ওদের মা ততটাই করেছেন। রাত-দিন এক করে পরিশ্রম করেছেন। কাগজের ঠোঙা বানিয়ে বিক্রি করেছেন। এমন কাজ নেই যা করেন নাই মানুষটা।
এতো কঠিন লড়াইয়েও রাহনুমার লেখাপড়া চলেছে। জীবন তখনো ওর কাছে আশার বাতিঘর। লেখাপড়া শিখে একটা সুন্দর জীবন গড়বে, মায়ের চোখে ফোটাবে আলো- এমন স্বপ্নই তো ছিল। স্বপ্নতো পূরণ হয়েছেই। ও এখন চাকরি করে। সংসার চালায়। দুমুঠো ভাত খায়। পোশাক পরে। তবু কেন বেঁচে থাকার মানেটা পাল্টে গেল?
ওদের আনন্দ-ব্যথার জীবনে একজন নতুন অতিথি এলো। মায়ের কারখানার সহকর্মী। ওদের চোখে ভয়ংকর বাবার ছবিটা আস্তে আস্তে মমতার স্পর্শে পাল্টে গেল। মায়ের অভাবী জীবনে যদি কিছু রোদ আসে, এই লোভে ওৱা নতুন অতিথিকে বাবার জায়গাটা ছেড়ে দিলো। তখনো রাহনুমা জানতো না পৃথিবীর কাছে হেরে যাওয়া মানুষদের সংখ্যা অনেক।
তমালের কথা মনে পড়ল রাহনুমার। ছেলেটা এত সরল সুন্দর। ওকে দেখলেই রাহনুমার রানু হয়ে হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছা করে। ইচ্ছা করে ওর পাশে বসে থেকে হোটেলের খাবারে অপূর্ব তৃপ্তির ঢেঁকুর শুনতে।
রাহনুমার গাল বেয়ে জমে থাকা কান্নারা ঝরে পড়ছে। প্রতি বছর ফাগুনের নয় তারিখ ওর জীবনে কান্না আসে আশীর্বাদ হয়ে। আজ আকাশে কি ঝকঝকে জোছনা!
বেশ কিছুদিন ধরে তমাল রাহনুমার পেছনে ঘুরঘুর করছে। কিছু বলতে চায়। রানুর খুব ইচ্ছা করছে তমালের পাশে বসে কাঁধে মাথা রেখে বলতে- তমাল, তোমাকে আমার ভীষণ ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এ কথা এখন পর্যন্ত সে বলে উঠতে পারেনি।