প্রথম পার্ট পড়ুন: বাস্তব জীবনের ছোট গল্প অন্যরকম ভালোবাসা
কী আশ্চর্য! আজ সারা দিনের ক্লান্তির মন খারাপে যে নির্লিপ্ততা ছিল চোখ জুড়ে, তা কেমন যেন তরল জল হয়ে বের হতে চাইছে চোখ থেকে। খুব গোপনে চোখের লজ্জাটুকু মুছে নিল রাহনুমা !
তমাল ছেলেটার এই ভীষণ মায়া থেকে পালাতে পারলেই যেনো ও বেঁচে যায়! মিথ্যার এই পৃথিবীতে কোনো মায়াকেই ও আর চায় না। যেই পৃথিবীতে জন্মদাতা পিতা সন্তানের জন্য লাঞ্ছিত জীবন রেখে পালিয়ে যায় অন্য আনন্দে, সেখানে মায়ার মতো পবিত্রতা নিয়ে কি কেউ আসতে পারে?
রাহনুমার আবার মনে পড়ে যায় আজ ফাগুনের নয় তারিখ ! রাতে সব সময় দরজায় হুক লাগিয়ে ঘুমায় রাহনুমা। এটা একটা নিয়ম হয়ে গেছে ওর জীবনে।
দরজা খোলা থাকলেই ওর বুকের ভিতর অজানা ভয় প্রকাশ পায়। যে শব্দ কখনো কখনো ওর নিঃশ্বাস কেড়ে নিতে চায়।
মায়ের খসখসে হাতের ছোঁয়া টের পাচ্ছে চুলে। রাহনুমার মনে পড়ল, আজ দরজার হুক লাগানো হয়নি। মা তার সদ্ব্যবহার করেছেন। দরজায় হুক দেয়া নিয়ে মা-মেয়ের খুব চাপা অভিমান চলে। ও কিছুই বলে না মাকে। শুধু চাপা নিঃশ্বাস লুকিয়ে রেখে চুপচাপ রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।
মা, তোমার হাতে রসুনের গন্ধ। রসুনের গন্ধ আমার ভাল্লাগে না। তুমি সুযোগ পেলেই এই গন্ধ নিয়ে আমার কাছে আসো। তাই দরজা লাগিয়ে রাখি।
মা রে, তুই আমারে এমন করে দূরে কেন রাখিস? আমার কে আছে তোদের ছাড়া? টগরটাও আজকাল আমারে দেখতে পারে না। চুপচাপ আসে, যায়। তুইও। আমি কী করব বল?
মা, উল্টাপাল্টা বলবা না। এইসব তোমার বানানো মন খারাপ। সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত থাকি। তাই আমি ঘুমাতে চাই রাতটুকু। আর দরজা না দিলে আমার ঘুম হয় না তুমি জানো।
রাহনুমা জানে ওর মা খুব দুঃখী একজন মানুষ। যে নারী তার স্বামীর কাছে আবর্জনার মতো, আপনজনদের কাছে বোঝা, সমাজের চোখে অযোগ্যতার খেতাবে দোষী স্ত্রী, সেই নারীর বুকে কষ্টের পাহাড়! চোখ শূন্যতার চাহনি! হৃদয়ে ক্ষয়ে যাওয়া ক্ষত! তবু রাহনুমা মায়ের সাথে সহজ হতে পারে না।
মাঝে মাঝে ওরও মনে হয় এই মহিলা আমার মা হয়েছিল বলেই আমার জীবনে সেই ভয়াল রাত এসেছিল। আহ, যদি আমার জন্মই না হতো!
মারে, তোর খুব খাটুনি হয় জানি। সংসারটাকে কী কষ্ট করেই না তুই টেনে নিচ্ছিস!
মা এই সব কথা ভাল্লাগে না এখন। তুমি যাও, আমি ঘুমাব।
খুকি, একটা কথা বলি?
রাহনুমার কপাল কুঁচকে যায়, চোখ সরু হয়ে যায়, কান সজাগ হয়ে যায়। ও জানে, মা বিশেষ কিছু বলার সময় ওকে খুকু ডাকে। যদিও এই ব্যাপারটা এখন সে তেমন আমলে নেয় না।
মা তোমার আলোচনা শুনতে ইচ্ছা করছে না। কী বলবে? টগরের কিছু লাগবে নাকি?
নারে! তো, রানু !
এক লাফে উঠে বসে রাহনুমা। মায়ের মুখোমুখি বসে জিজ্ঞেস করে- তুমি এই নামে ডাকলে কেন?
মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যান রাহেলা। তিনি বললেন- কেনো রে, এই নামে ডাকলে কী হবে?
তুমি তমালের কাছ থেকে শুনেছ এই নাম। এবার বলো, ও তোমাকে কই পেল? কিংবা তুমি ওকে কই পেলে? প্রশ্নটা করে সরাসরি মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে রাহনুমা। ওর চোখে কিছুটা রাগ কিছুটা বিরক্তি ।
বলো তো তোমাদের দেখা কই হলো?
মা, রাগ করছিস কেন?
রাগ করছি না মা। ঠিক উত্তরটা আগে দাও ।
ও সন্ধ্যার একটু আগে এসেছিল। ছেলেটা কী ভালোরে। পায়ে হাত দিয়ে আজকাল কেউ সালাম করে! তারপর আমার সাথে মা বলে কী মায়া নিয়ে কথা বলল। তোদের কষ্টের ভালোবাসার গল্প সে আমাকে বলল।
রাহনুমা মায়ের ভূমিকা বুঝতে পারল এবং তাতেই ওর রাগটা আরো বেড়ে গেলো।
মা তোমার অন্তত এই আদিখ্যেতা করা উচিত না। ছেলেটা কেমন সেটার থেকেও বড় কথা তোমার মেয়েকে নিয়ে তুমি কেন দিবাস্বপ্ন দেখ? আমি তোমার চোখে লোভ দেখতে পাচ্ছি মা।
পরবর্তী পার্ট পড়ুনঃ বাংলা গল্প অন্যরকম ভালোবাসা পার্ট ৩