বাংলা গল্প অন্যরকম ভালোবাসা | বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প

বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প


ফাগুনের আজ নয় তারিখ। রাহনুমার কাছে এই দিনটা অনেক স্মরণীয়। যত্ন করে অতি সুখের দিনগুলোই হৃদয়ে তুলে রাখা যায়। মানুষের জীবনে সুখের গল্প যতটা জায়গা জুড়ে থাকে দুঃখের স্মৃতিও তেমন করেই আপন জায়গা নিয়ে বসে থাকে।

বাবা নিরুদ্দেশের আজ ২০ বছর। কী আশ্চর্য! বাবার চলে যাওয়ার দিনের কথা রাহনুমার মনে নেই। মনে আছে ফাগুনের নয় তারিখের কথা। এইসব বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প সে শুধু নিজের মনের ভিতরে রাখে।

বাবার সাথে মেয়েদের আহ্লাদী একটা সম্পর্কের ছবি কেন যেন সুনিপুণভাবে আঁকা থাকে প্রায় সব মেয়েদের অন্তরে। অথচ রাহনুমা নিজের জীবনের কোনো গল্পেই বাবার এমন একটা ছবি খুঁজে পায় না।

ওর কাছে বাবা মানে ভয়, সংশয় আর কপাল কুঁচকে অবহেলা প্রকাশের নাম। তাই বাবার ফেরারি হয়ে যাওয়ার স্মৃতি ওদের দুই ভাইবোনের মনে তেমন কোনো আঁচড় কাটেনি।

প্রতি বছর নয় তারিখ এলেই ওর দুচোখে নীল ছায়া পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে হৃদয় পাথর হয়ে গেলে চোখে আর আর্দ্রতা থাকে না। থাকে নীলাভ ধুসর একটা ছায়া। যেই ছায়ার কোনো অভিব্যক্তি নেই, রূপ নেই, রঙ নেই।

এই রানু। লাঞ্চ করবে না? লাঞ্চ আওয়ারের টাইম ওভার হয়ে যাবে তো। দেখো কেউ নেই। তমাল রাহনুমাকে বলল।

সে এসে রাহনুমাৱ টেবিলের পাশে দাঁড়াল। ছেলেটা বেশ মিশুক। প্রাণখোলা আনন্দের বাহক যেনো একটা। অফিসের সব স্টাফদের সাথেই তার সখ্য। গায়ে পড়ে এসে যেন ভাব জমাতেই হবে। সবাইকে সে নিজের পছন্দ অনুযায়ী নাম কাটছাঁট করে ডাকে। রাহনুমাকে ডাকে রানু নামে।  

কী হলো, লাঞ্চ করবে না?

রাহনুমা ঘড়িতে সময় দেখে নির্লিপ্ত স্বরে বলল- হুম, করা দরকার!

রানু, তুমি যে কেন এতো মনমরা হয়ে থাকো আমি বুঝে উঠি না। এই তোমার যেন বয়স কত হলো? ছাব্বিশ নাকি সাতাশ?

তমাল রাহনুমার জীবনের গল্প জানে না। হয়ত এইজন্য সে তার মন খারাপের কোনো কারণ খুঁজে পায় না। রাহনুমাও আগ বাড়িয়ে তমালকে তার বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প সম্পর্কে বলে না। তার এই শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প হয়তো কেউ জানবেও না।

রাহনুমা মুখে জোর করে টেনে আনা একটা হালকা হাসিতে তমালের কথার জবাব দিতে চাইলো, কিন্তু কী অদ্ভুত, কোনো কথা ফুটল না মুখে।

অসহায় দৃষ্টি মেলে তমালের দিকে তাকিয়ে বলল- চলো, ক্যান্টিনে যাই, লাঞ্চের টাইম ওভার হয়ে যাচ্ছে।

হুম চলো, তমাল বলল।

রাহনুমা নিজের খাবার ফেলে রেখে তমালের খাওয়া দেখছে। জগতে কিছু মানুষের জীবন বর্ণিল শৈল্পিকতায় মোড়ানো! তমালকে না দেখলে রাহনুমার হয়তো পৃথিবীর আনন্দপাঠ সম্পর্কে জানাই হতো না।

ও কী আয়েশ নিয়ে ডাল, মুরগি আর ভাত খাচ্ছে। অথচ রাহনুমার ধারণা, ক্যান্টিনের বাবুর্চির রান্না জগতের সব থেকে বাজে রান্না। যেটা মুখে দিয়ে খাবার যোগ্য না।

অথচ তমালের খাবারের দৃশ্য সেটা বলছে না। ও যেন খাচ্ছে বেহেশতের মেওয়া! এক হাতের কাঁচা মরিচে কামড় দিয়ে দিয়ে ওর চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া খাওয়া দেখার জন্য রাহনুমা রোজ তমালের টেবিলে খেতে বসে। নিজের খাওয়া ফেলে রেখে ওর খাওয়া দেখে। 

ছেলেটা কী সুন্দর জীবন পার করছে। শিশুর মতো পবিত্র জীবন। একটা টং দোকানের চায়ে টোস্ট ভিজিয়ে খাওয়ার ভিতরেও এত্ত নিখুঁত শিল্প আছে সেটা তমালের জন্যই জানা হয়েছে রাহনুমার।

হায়, এই মানব জীবন কতো রহস্যময়। কেউ জীবনকে দেখে মুঠোয় পুরে রাখা জোনাক পোকার মতো ছেলেখেলার ছলে, কেউ জীবনকে অন্ধকারের মতো!

এই, কি হলো রানু? খাচ্ছ না যে তুমি?

ক্লান্তির নিঃশ্বাস টেনে রাহনুমা জবাব দিলো- আমার শরীরটা আজ ভালো নেই তমাল। মনে হয় কিছু খেলেই বমি হবে, তুমি খাও প্লিজ! 

মুখ ভর্তি খাবার আর চোখে মায়ার ছায়া নিয়ে তমাল রাহনুমার কপালে হাত ছোঁয়ালো- কই, জ্বর নেই তো।

রাহনুমা হেসে বলল, আমি কি বলেছি জ্বর হয়েছে! বলেছি শরীর খারাপ লাগছে।

তমালের চোখে বোকা বোকা লজ্জা এসে জমা হয়েছে।

ছি, আমি কী পেটুক! তুমি যেখানে খাবারে হাত দিতেই পারনি অসুস্থতার জন্য, আর আমি পেটুকের মতো খেয়েই যাচ্ছি।

আরে বোকা, তুমি খাও। আমি তোমার খাওয়া দেখছি। তোমার খাওয়া দেখলেই আমার পেট ভরে যায়!

তমাল আরো বেশি লজ্জা পেল। বাকি খাবার সরিয়ে রেখে হাত ধুয়ে রাহনুমাকে বলল, চলো, তোমাকে আজ রং চা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়াব। তুমি বলেছিলে না এটা তোমার প্রিয় খাবার। শরীর খারাপ হলেই তোমার রং চা দিয়ে চিতই পিঠা খেলে ভাল্লাগে।

পরবর্তী পার্ট পড়ুনঃ জীবনের গল্প অন্যরকম ভালোবাসা পার্ট ২

Check Also

ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প | সাহসী বালক পার্ট ৩

প্রথম পার্ট: ছোটদের রূপকথার গল্প সাহসী বালক দ্বিতীয় পার্ট: ছোটদের কাল্পনিক গল্প সাহসী বালক পার্ট ২ তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *