একজন ফ্রিল্যান্সার এর জীবনী | ফ্রিল্যান্সিং করে সফল ব্যাক্তির গল্প

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো


ছেলেটা সারাদিন কম্পিউটারে কি করে? সে এত রাত জেগে কম্পিউটারে কি করে ? এসব কথা তাকে নিয়মিত শুনতে হয়। এসব কথা তার কাছে খারাপ লাগে। সে ভাবে মানুষ নিজের কাজ রেখে অন্যের কথা কেন এতো ভাবে। তাদেরকি নিজেদের নিয়ে ভাববার কোনো দরকার নেই। আসে এসব ভেবে সে মাঝেমাঝে আফসোস করে।

২০২০ সালের দিকে চারদিক যখন স্তব্ধ। মানুষ তার কাজকর্ম হারিয়েছে। মাসুদের কলেজও বন্ধ। সে কলেজে নিয়মিত এবং পড়াশোনায়ও ভালো ছিল। SSC তে বৃত্তিও পেয়েছিল। কলেজ বন্ধের সময় তার দিন যেন কাটছিল না।

তার সহপাঠী ও বন্ধুরা তখন বিভিন্ন অনলাইন গেমে আসক্ত। তার বন্ধুরা তাকে এসব ভিডিও গেম খেলতে বলে। কিন্তু সে এসব সময় নস্টকারী গেম খেলে না। সে নিজে নিজে ভাবে আমি তো খারাপ ছেলে নই, তাহলে আমি কেন গেম খেলব।

বন্ধুদের গেমে আসক্ত দেখে তার খারাপ লাগে। সে ভাবে, এসব গেম খেলে লাভ কি। শুধু শুধু সময় নষ্ট হয়। সে তার বন্ধুদের বোঝাতে চাইলেও তারা তা মানে না।

ঘরে থাকতে থাকতে মাসুদও বিষণ্ণ হয়ে গেছে। তার এই অবস্থা দেখে সে নিজেকেই চিনতে পারছে না। সে নিজেই নিজের কাছে হার মানল। সে গেম খেলা শুরু করল। সেও আস্তে আস্তে এই গেমের জগতে ঢুকে পরে।

একদিন সে ইউটিউবে গেমের ভিডিও দেখেছিল। একটা ভিডিও তার পুরো জীবন বদলে দেয়। সে হয়তো এটা কোনোদিন ভাবেনি যে একটা ভিডিও তার জীবন পালটে দিবে। একটা ভিডিওর আকর্ষণীয় থাম্বনেইল দেখে তার মধ্যে ভিডিও দেখার কৌতূহল কাজ করল।

সেই ভিডিওটা ছিল প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত। সে দেখতেছিল গেমিং ভিডিও কিন্তু, তার ইউটিউব সাজেস্টে প্রোগ্রামিং ভিডিও আসল কিভাবে? সে এই কথাটা ভাবল। তাই কৌতুহল আরো বেড়ে গেল।

সে দেখল যে সকল মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট প্রোগ্রামিং করে তৈরি করা হয়েছে। তার মনে প্রোগ্রামিং সম্পর্কে নানান কৌতুহল জন্মাল। তাই সে ঠিক করল গেম খেলা ছেড়ে দিয়ে প্রোগ্রামিং শিখা করল।

সে ইউটিউবে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ কি লিখে সার্চ করে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পেল। সে ইউটিউবে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ সম্পর্কেও ধারনা পেল। সে ঠিক করল প্রোগ্রামিং শিখে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করবে। এছারা সে ইউটিউবে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো নামের একটা ফ্রী কোর্স করে কিছুটা প্রোগ্রামিং শিখল।

অন্য কেউ হলে হয়তো কোনো রকম কোর্স ছাড়া এসব ল্যাংগুয়েজ শিখতে পারত না। কিন্তু মাসুদের ছোটকাল থেকেই নতুন কিছু শিখার আগ্রহ ভালো। নতুন কোনো বই পেলে একদিনেই পড়ে শেষ করে ফেলত। তাই সে ইউটিউবে টিউটরিয়াল ও গুগল থেকে ল্যাংগুয়েজ শিখতে পারলো।

সে প্রথমে HTML শিখল ইউটিউব টিউটরিয়াল দেখে। তারপর CSS টাও একটু করে শিখে ফেলল। তার মনে রাখার শক্তি খুব ভালো। সেজন্যই তো সে প্রত্যেকবার পরীক্ষায় ভালো করে। সে ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হওয়ার জন্য  javascript, PHP, Python, C প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখল ।

কিছুদিন পর তার মনে হল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ভালো মত শিখতে একটা ভালো কোর্স করতে হবে। সে তার জমানো টাকা দিয়ে একটা কোর্স কিনে কোর্স করল। ঘরে পরে থাকা, পুরোনো ল্যাপটপটাই তার  শেখার সঙ্গী।

তার বাবা-মা ভাবত সেও অন্যদের মতো গেম খেলছে। তারা তাকে গেম খেলার জন্য রাগারাগি করত। তারা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ তা কি জানে না।

মাসুদ যখন প্রোগ্রামিং শিখার কথা বলল, তখন তারা ভাবল হয়ত কোনো দেশের ভাষা শিখছে।

এই ডিজিটাল জগতে বেশিরভাগ মানুষই পরিবারের সমর্থন পায়না। যা মাসুদের ক্ষেত্রেও সঠিক। তার মা-বাবা তাকে গেমে আসক্ত ছেলেদের সঙ্গে তুলনা করতে। সে কখনো এসব কথায় কান দিত না, তবে ভিতরে ভিতরে বিষণ্ণ থাকত।

এভাবে একসময় তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মা-বাবা রাগ করলে, সে আর আগের মত চুপ থাকতে পারত না। তারা ভাবতেন ছেলে হয়তো বখাটে হয়ে গেছে।

একদিন তারা মাসুদের ল্যাপটপ টি ভেঙ্গে ফেলে। অনেক চেস্টার পরও সে কিছুতেই ল্যাপটপটা ঠিক করতে পারল না। সে ল্যাপটপ ঠিক করার আশা ছেড়ে দেয়।

এতদিন সে HTML, CSS, javascript সহ আরো কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ  শিখে ফেলেছে। সে তার মোবাইল দিয়ে যথাসব প্রোগ্রামিং শেখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মোবাইল দিয়ে সে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখতে পারল না।

সে সিদ্ধান্ত নিল সে এতদিনে যা শিখেছে তা দিয়ে ওয়েবসাইট বানাবে। সে তার বন্ধু ও আত্মীয়দেরকে ওয়েবসাইট বানিয়ে দিয়ে কিছু টাকা আয় করল। ফেসবুকের কয়েকটা ই-কমার্স শপকে ওয়েবসাইট বানিয়ে দিয়ে সে ভালো আয় করল।

তার আয়কৃত সব টাকা মিলিয়ে সে কমদামি একটা ডেস্কটপ কিনে নিল । ডেক্সটপে তার প্রোগ্রামিং শিক্ষা ভালো মতোই চলে চলতে থাকল। সে এখন PHP শিখছে। 

প্রোগ্রামিং শেখার পাশাপাশি সে ওয়ের ডেভলপমেন্ট চালিয়ে যায়। কয়েকদিন পর সে PHP শিখে ফেলল।

এর মধ্যে দেশের পরিস্থিতি জন্য তার বাবা চাকরি হারা হন। মাসুদের উপর আরো চাপ পরে। সে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ নিজের প্রোফাইল তৈরি করল। সে সুন্দর মতো করে তার একটা পোর্টফলিও তৈরী করে নিল ।

এক সপ্তাহের মধ্যেই সে কাজ পেল। সে কাজের পাশাপাশি আরো কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখল। তাছারা আগের শেখা ল্যাংগুয়েজ গুলোর প্রাক্টিস করত।

সে এখন ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটে তার বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাজ করছে। সে তার উপার্জিত টাকার কিছু অংশ তার পরিবার কে দিয়ে দেয়। বাকি টাকা সে জমায় নতুন একটা ডেস্কটপ কিনবে বলে। কারন এই ডেস্কটপে ভালোমত কাজ করা যায় না।

সে দিন রাত জেগে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজ করে। সে সম্পূর্ণভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে গেল। অল্প দিনের মধেই সে তার শখের নতুন ডেস্কটপ কিনে ফেলল।

এভাবে একদিন সব পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যায়। মাসুদের কলেজও খুলল। সে এখন পড়াশুনার চাপে প্রোগ্রামিং কম করছে।

সে প্রথমদিন কলেজে গিয়ে সব কিছুতে কেমন যেন বদল দেখল। তার চিরচেনা কলেজ, বন্ধু-বান্ধব সপবকিছু যেন বদলে গেল।
সে এখন সব মনোযোগ পড়াশুনায় দিয়েছে। কারন কয়েকমাস পর শর্ট সিলেবাসে তাদের এইচ এস সি পরীক্ষা হবে। সে ফ্রিল্যান্সিংয়েও ইনেক্টিভ।

কয়েকমাস টানা পড়াশুনার পর সে এইচ এস সি পরীক্ষা দিল। সে পরীক্ষায় আশানুরূপ রেজাল্ট করল।

সবকিছু আগের মত স্বাভাবিক হল। তার বাবা তার চাকরি ফিরে পেল। এরপর যেন সব মাসুদের সপ্নের মত চলল। সে টানা খাটনির পর বুয়েটে সি এস ই তে চান্স পেল। এতে তার পরিবারের সবাই খুশি হল।

সে তার বিভাগ থেকে আপওয়ার্কে প্রথম পজিশনে উন্নিত হল। তার এই সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে ওঠার গল্প পত্রিকায় ছাপা হল।

পরবর্তী পার্ট পড়ুন: বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প ফ্রিল্যান্সারদের জীবন পার্ট ২

Check Also

ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প | সাহসী বালক পার্ট ৩

প্রথম পার্ট: ছোটদের রূপকথার গল্প সাহসী বালক দ্বিতীয় পার্ট: ছোটদের কাল্পনিক গল্প সাহসী বালক পার্ট ২ তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *