দুই বন্ধুর বাংলা গল্প পার্ট ৩ | বন্ধুত্ব নিয়ে ছোট গল্প

পূর্ববর্তী পার্ট পড়ুন

বন্ধুত্বের কষ্টের গল্প দুই বন্ধু পার্ট ১

সেরা বন্ধুত্বের গল্প দুই বন্ধু পার্ট ২

ছোটদের রূপকথার গল্প


সে কি করবে ভালোমত বুঝে উঠতে পারল না। সে চারদিকে নিলার খোঁজ করতে লাগল। কিন্তু লঞ্চ ঘাটের আশেপাশে তাকে খুঁজে পেল না।

কিছুক্ষন পর সে নদীর দিকে তাকিয়ে দেখে, নিলা আরেকটি ট্রলারে উঠে পরেছে। সেই ট্রলারটি ছেড়ে দিয়েছে। সে তারাতারি নদীতে লাফ দিয়ে সাতাঁর কাটতে কাটতে ট্রলারটিতে উঠে পরল।

নিলা আগে সেই দোকানটির কাছে গিয়ে সাফওয়ানকে না পেয়ে ট্রলারে উঠে পরেছিল। সে ট্রলারটি কক্সবাজারগামী।

তারা কক্সবাজারে পৌঁছে গেল। তারা কক্সবাজারে একলা খুব মজা করল। তারা অনেকদিন পর শহুরে জীবন থেকে বেড়িয়ে এইখানে এসেছে। তারা হারিয়ে গেলেও তারা এতে বরঞ্চ খুশি।

সাফওয়ানের একটি বন্ধু হলো। তার নাম শাওন। সাফওয়ান সবকিছু শাওনকে খুলে বলল। সাফওয়ান শাওনকে বলল- তোমার সাথেও কি আমার মত এমন কিছু হয়েছে?

শাওন বলল- আমার সাথে এমন কিছু হয়নি। তবে কিছুটা এরকমই হয়েছে। আমি টাকা জমিয়ে একদিন একটি দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেই দোকানটির দূরত্ব শাওনের বাসা থেকে ২০ টাকার ভাড়া। তাদের কাছাকাছি সেই দোকানটির মত কোনো দোকান ছিল না। তাই তাকে বাধ্য হয়েই সেখানে যেতে হল।

সে দোকান থেকে একটি টর্চ লাইট কিনে বের হতেই তাকে একজন হঠাৎ করেই লোকজনের অগোচরে ধরে নেয়। তাকে অন্য কোনো জায়গায় নেওয়ার আগেই সে টর্চ লাইট ও বাকি টাকা ফেলে দৌড়ে পালায়।

সে পথ হারিয়ে ফেলে। তখন থেকেই সে কক্সবাজার সৈকতের এখানে সেখানে থাকে। শাওন আরও বলে, তার বাবার নাম আলি। তার বাবার মৃত্যুর পর তারা কক্সবাজারে থাকে। সে তার বাবার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা খুলে বলল।

সাফওয়ান ভেবে দেখল তার বাবার বন্ধু আলির সাথে শাওনের কথা মিলে গেছে।

সাফওয়ান শাওনকে সেখানকার কাছের পোষ্ট অফিসে গিয়ে একটি নিখোজ বিজ্ঞপ্তি করতে বলল। তারা দুইজন তাই করল। শাওনের মাথায় এই কথাটা এতদিন আসে নাই।

শাওনের মা পত্রিকা পড়ে দেখল শাওনের কথা জানতে পারল। তারপর সে তারাতারি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাল। শাওনের মা শাওনকে দেখতে পেল। সঙ্গে সঙ্গে শাওনের মা দৌড়ে শাওনকে কোলে তুলে নিল। তারা দুজনই কেঁদে দিল। শাওন তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল কথা খুলে বলে তার মাকে। 

তারপর তারা সাফওয়ানের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরেরদিন সকালে তারা সাফওয়ানের বাসায় পৌছল । তার পর তারা সাফওয়ানের বাড়ি পৌঁছল।

দরজা খুলতেই তার মা সাফওয়ানকে দেখতে পেল।  এভাবে সাফওয়ান তার পরিবারের কাছে ফিরে গেল। শাওনরা তাদের বাসায় ফিরে গেল।

তারপর সাফওয়ানরা ঢাকায় চলে গেলো। সাফওয়ানের লেখা-পড়ার ঢাকায় এসে একটি স্কুলে এ ভর্তি হল। সাফওয়ান একদিন তার প্রিয় ৫ জন বন্ধুকে তার বাসায় দাওয়াত দিল। দাওয়াতের পর তারা বাড়ি ফিরে যায়। 

একদিন তার প্রিয় বন্ধু দিল্লুকে কে যেন ধরে নিয়ে যেতে দেখেছে সাফওয়ান। সঙ্গে সঙ্গে সাফওয়ান তার পিছু নিল। তার পিছু হাঁটতে হাঁটতে সে এক জায়গায় পৌঁছে গেল। সেখানে কোনো মানুষ নেই।

এলাকাটি একেবারে নির্জন। সেখানে কয়েক জন লোক। তাদের সবার হাতে অস্ত্র। সেখানে অনেক ধান গাছ ও ঘাস। সে ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে পরল।

হঠাৎ করে তার এক বন্ধু লুকিয়ে এল। তার নাম ফিয়াম। সেও দিল্লুকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছিল। সাফওয়ানকে তার পিছে যেতে দেখে সে তাদের পিছু করল

বাইরে একজন পাহারা দিচ্ছে। তার হাতেও অস্ত্র। কিছু সময়ের মধ্যেই সন্ধ্যা নেমে এল। তারা সেখানে আগের মতই বসে রয়েছে। তারা দুজনে একটি বুদ্ধি বের করল। তারা তাদের শার্ট বেধে একটি রশি তৈরি করল।

তাদের পরিকল্পনাটি ছিল এরকম। সাফওয়ান তাদের কোড বললে ফিয়াম ও সে ঝাপিয়ে পরে পাহাড়াদারটির উপর হামলা করবে। তারপর তারা পাহাড়াদারকে নিরস্ত্র করবে।। তারপর তাকে বেধে তাদের বানানো রশি দিয়ে বেধে ফেলবে।

তারা অনেক্ষন পর্যবেক্ষণ করে দেখল যে ভিতরে কারও হাতে কোনো অস্ত্র নেই। তারা দিল্লুকে ওদের থেকে মুক্ত করে পুলিশকে খবর দিবে। সাফওয়ান বলল পুলিশকে এই খবর দেওয়ার আগে বড় কাউকে নিয়ে যেতে হবে। তা নাহলে পুলিশ তাদের কথা বিশ্বাস করবে না।

কিছুক্ষন পর সাফওয়ান ফিয়ামকে কোড বলল। তারা সবকিছু তাদের পরিকল্পনামত করল। তারা পাহারাদারকে ধরে অস্ত্র নিয়ে তাকে বেঁধে ফেলল। সাফওয়ান সেখানে থাকল এবং ফিয়াম কে পুলিশ ডাকতে বলল। ফিয়াম সাফওয়ানের কথা মত কাজ করল।

সাফওয়ান বাইরে থেকে বলল – দিল্লুকে ছেড়ে দাও, তা না করলে তোমাদের পাহারাদারকে মেরে ফেলব। ভিতর থেকে কে একজন বলল- তুমি অস্ত্র ফেলে দাও। সাফওয়ান বলল- আমি বন্দুক নিচু করব, আর তোমরা দিলুকে ছেড়ে দিবে। তারা সাফওয়ানের কথা মেনে নিল।

সাফওয়ান বন্দুক নিচু করতে লাগল ও তাদের পাহারাদারকে ছেড়ে দিল। তারাও দিল্লুকে ছেড়ে দিল। দিল্লু তার কাছে আসতেই তারা দৌড়ে বাহির হয়ে গেল। ততক্ষনে পুলিশও এসে পরেছে। পুলিশ তাদের কে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল।

এরপর কয়েক মাস কেটে গেল। সাফওয়ান ও ফিয়াম আগের মতই ভালো বন্ধু। একদিন সকলে সাফওয়ানকে ফিয়াম তাদের বাসায় নিয়ে গেল। ফিয়ামের বাবা একজন কাঠমিস্ত্রি। তারা একটি গরিব পরিবারের।

ফিয়াম বলল- আমার বাবার রোগ হয়েছে। ডাক্তার বলল তাকে অপারেশন করাতে হবে। এ জন্য অনেক টাকা লাগবে। তুই কিছু টাকা দিতে পারবি, সাফওয়ান।

সাফওয়ানের বাবা যেহেতু একজন ব্যাবসায়ী। তাই তাদের প্রচুর ধন সম্পদ রয়েছে। তাই সাফয়ান ফিয়ামকে সব টাকা দিবে বলেছিল।

সাফওয়ান নিজের বাড়ি চলে গেল। বাড়ি গিয়ে সব তার বাবা ফিহাদকে বলল। তিনি ফিহাদকে ফিয়ামকে সাহায্য করার জন্য কিছু টাকা দিলেন। বিকালে সাফওয়ান ফিয়ামের বাড়ি গিয়ে তাকে টাকা দিল।

ফিয়াম বলল- আমি যদি এত টাকা পাই তাহলে আমি তোর টাকা ফেরত দেব।

সাফওয়ান বলল-এক বন্ধুই তো আরেক বন্ধুর তো সাহায্য করে। তোর আর আমাকে টাকা ফেরত দেয়া লাগবে না।

ফিয়ামের মন খুশিতে ভরে গেল। ফিয়াম টাকা নিয়ে বাড়ি যাবার সময় একজন ছিনতাইকারী তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে চাইল। তখন দিল্লু বাড়ি যাবার সময় ফিয়ামকে দেখল।

দিল্লু দৌড়ে ফিয়ামের কাছে আসল। তারা কৌশলে ছিনতাইকারীকে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর তারা দুজন সেখান থেকে দৌড়ে বাড়ীতে চলে আসল। ফিয়াম তার বাবার অপারেশন করালো।

একদিন ফিহাদ পত্রিকা পরে দেখল যে-  তারা ছো্টবেলায় যে গ্রামে থাকত সেই গ্রামে একজন মহিলা বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরন করেছে। তার ছোট ছেলে ফুয়াদ পত্রিকায় এই খবর ছাপিয়েছে

সেখানে আরও লেখা ছিল যে তার বড় ভাই আলি একদিন স্কুলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তার মা সারাজীবন তার খোঁজ করেছে। মৃত্যুর আগে তিনি আলিকে দেখে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা পারেননি। তাই তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার বড় ভাইকে খুঁজে পেতে তিনি এই খবর পত্রিকায় ছাপিয়েছেন।

ফিয়াদ সব পড়ে আলির সাথে মিল খুঁজে পেল। ফিহাদ আলির বাবার সাথে দেখা করে তাকে সব খুলে বলবে বলে ঠিক করল।

পরেদিনই সে গ্রামে চলে গেল। তারপর সে আলির বাড়ি খুজতে লাগল।

তাকে একজন জিজ্ঞেশ করল- আপনি কাকে খুজছেন?

ফিহাদ তাকে বলল- আমি আলির বাড়ী খুজছি। 

লোকটি ফিহাদকে আলির বাড়ী নিয়ে গেল। সে ফিহাদকে আলির বাড়িতে পৌছে দিয়ে চলে গেল। ফিহাদ তাকে ধন্যবাদ দিল।

সে আলির বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নারল। তারপর একজন ভিতর থেকে বের করে হয়ে এসে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করল। ফিহাদ তার নাম ও পরিচয় লোকটিকে বলল।

ফিহাদ বলল- আমি আপনার ছেলে আলির বন্ধু।

আলির বাবা তাকে চিনতে পারল। সে ভিতরে গিয়ে তাকে সব খুলে বলল। হঠাৎ ফিহাদের মনে হলো- আলির বাসার কাছেই তো তার বাসা।

সে সঙ্গে সঙ্গেই তার বাসায় চলে গেল। ফিহাদ দরজায় কড়া নারতেই তার মা বের হয়ে এল। ফিহাদ তার মাকে চিনতে পেরে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। তারপর সব পরিবার মিলে তারা শুকে শান্তিতেই দিন কাটাতে লাগল। তবে আলির কথা ভেবে প্রায়ই সে দুঃখ পায়।

Check Also

ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প | সাহসী বালক পার্ট ৩

প্রথম পার্ট: ছোটদের রূপকথার গল্প সাহসী বালক দ্বিতীয় পার্ট: ছোটদের কাল্পনিক গল্প সাহসী বালক পার্ট ২ তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *