ছোটদের গল্প জাদুর কলম | ছোটদের শিক্ষামুলক গল্প

ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প


বাসা পাল্টেছে শারমিনরা। সবকিছু এলোমেলো। নিজের ঘর গোছাচ্ছে শারমিন।

হঠাৎ ওর চোখ আটকে গেল গোলাপি রঙের চিকন একটা কলমে। তুলে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখল ওটা। কলমটায় বিশেষ কিছু নেই। তাহলে ওকে এত টানছে কেন ওটা? কালি আছে কিনা দেখে কলমদানিতে রেখে দিলো কলমটা।

সে রাতে শারমিন স্বপ্নে দেখল, কলমটিকে তাকে বলছে,


আমি অলৌকিক কলম। তুমি আমাকে শুধু ধরবে, আমি সুন্দর হাতের লেখায় সবকিছুর সঠিক উত্তর দ্রুত লিখব।

শারমিন ঘুম ভেঙে উঠে বসল ।

সেদিন গণিত ক্লাসটেস্টে ওই কলমটা নিল শারমিন। ও শুধু কলমটা ধরল। হঠাৎ কলমটা খুব দ্রুত লেখা শুরু করল। এমনকি যে প্রশ্নটার উত্তর শারমিন জানে না, গড়গড়িয়ে সেটার উত্তরও লিখে গেল কলমটা। পরে দেখা গেল শারমিন ক্লাসটেস্টে বিশে বিশ নম্বর পেয়েছে।

এরপর থেকে সব লেখা ওই কলম দিয়ে লেখা শুরু করল শারমিন। ফলে একটা কলম দিয়েই প্রচুর লেখা হল, কিন্তু কলমের কালি কিছুতেই শেষ হয় না ।

প্রায়ই কলমটা ওর স্বপ্নে দেখা দিয়ে জানতে চায়, সে কী চায়। পরদিন সকালে উঠে দেখা যেত, শারমিন যা চেয়েছে তা তার টেবিলে রাখা আছে।

শারমিন একদিন ভাবল, আমার তো আর পড়াশোনার দরকার নেই, কলমই সব লিখে দিচ্ছে ।

যেই ভাবা সেই কাজ। সেদিন থেকে সে পড়া বন্ধ করে দিল। পরদিন তার ক্লাস টেস্ট। ক্লাস টেস্টে গিয়ে শারমিন কলম ধরে বসে থাকল। কিন্তু কলম আর লেখে না।

সে নিজে লেখার চেষ্টা করল। কিন্তু সে নিজে যা পারে না, তা কি করে লিখবে। সে ঠিকমত লিখতে পারল না। মার্কসও গেল কম।

কলমের জাদুকরি ক্ষমতা কি শেষ? শারমিন মন খারাপ করে ভাবতে লাগল ।

এমন কলমনির্ভর হওয়া আমার ঠিক হয়নি । কলম লিখে যাবে আর আমি মার্কস পাবো, এটাই বা কেমন কথা? আমি পড়ালেখা করে যা অর্জন করব তার ফল আমার পাওয়া উচিত। কলম এমন বেশি নম্বর পাইয়ে একেবারেই ভালো করেনি। নিজের ওপর খুব রাগ হলো ওর। 


মনে পড়ল ছোটবেলার কথা । ক্লাস ওয়ান-টুতে থাকতে পড়াশোনা বেশ ভালো করত বলে শিক্ষকেরা আদর করে তাকে শান বলে ডাকতেন। শান মানে তেজি। খাতায় মজার মজার স্টিকার লাগাত। পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে বই খাতা, কলম উপহার পেত।

হাইস্কুলে আসার পর শারমিনের কেন যেন পড়ায় মন বসে না । জোর করে পড়লেও পড়া মনে থাকে না । সৃজনশীল প্রশ্ন কিছুতেই গুছিয়ে লিখতে পারে না। মহা মুশকিল । কেন যে এমন হয়!

কিন্তু কলমটা পেয়ে তো ভালোই হয়েছিল। ধুর ছাই এখন কলমটাও কাজ করে না । এসব উল্টাপাল্টা ভাবতে ভাবতে শারমিন ঘুমিয়ে পড়ল ।

চোখ বুজতেই কলমটা ভেসে উঠল সামনে। বলল,


চিন্তা করো না । আমি তো আছিই । আমি কোনো সাধারণ কলম নই। আমি ইরান থেকে এসেছি, মহাকবি ফেরদৌসীর প্রিয় কলম। সমুদ্রে পড়ে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশে আসা। আমার ওপর দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। তোমার দাদা কক্সবাজারে আমাকে পায় । তোমার দাদা সুন্দর ফারসি জানতেন। আমাদের কথা হতো ফারসিতে । উনি আজ নেই, কলমটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল ।

শারমিনের মনে হলো যেন ওর দাদাই বলছেন, ‘মন দিয়ে পড়, তাহলে সব হবে।’ শারমিনের তার দাদার কথা খুব মনে পড়ে। তিনি শারমিনকে শিশুদের মজার গল্প শুনাতেন। শারমিন সেই সব গল্প শুনে ঘুমিয়ে পরত।

অমনি ওর ঘুম ভাঙল । সবকিছু কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। দৌড়ে গিয়ে কলমটা হাতে নিলো ও । কলমটাতে সত্যিই কী যেন লেখা আছে, কিন্তু শারমিন পড়তে পার না । বিষয়টা মনে তোলপাড় সৃষ্টি করে ওর, কিন্তু কাউকে বলতে পারে না।

এভাবে দুয়েক দিন না যেতেই শারমিনের মনে অবস্থা অন্যরকম। ক্লাসে মনোযোগী, পড়তে ভালো লাগে, প্রতিটি বিষয় গভীরভাবে বুঝতে চায় । সৃজনশীল প্রশ্ন খুব সুন্দর লিখতে পারে।

একটু বিরক্ত হলেই অলৌকিক কলম বলে ওঠে, ‘বিরক্ত হয়ো না, রাগ করো না, সহনশীল হও। তুমি সফল হবে।’ কলমটি শারমিনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী।

Check Also

শিক্ষনীয় হাসির গল্প দুলাইভাইর ইউটিউবিং | কমেডি হাসির গল্প

দুলাভাই রসিক মানুষ। সংসারি নয়। আমার মতে তিনি অ্যাকসিডেন্টাল বিয়ের শিকার। যখন যেটা মাথায় আসে, একচোট এক্সপেরিমেন্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *