ছোটদের গল্প বাড়ী ফেরার পথ | ছোটদের শিক্ষামুলক গল্প

ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প


ছোট ছেলে রাতুল। শৈশবের পেরিয়ে কৈশোরের বারান্দায় পা। কিছুটা লাজুক, কিছুটা সাহসী। ওর চরিত্র এ সময়ে ঠিক নির্ণয় করা মুশকিল। ওর দুষ্টুমিকে মাঝে মধ্যে মনে হয় উচ্ছ্বাস। বুদ্ধিকে বলা হয় চালাকি। 

বায়না ধরেছে তার বাবার সাথে হাটে যাবে। বাবা নিয়ে গেলেন সঙ্গে। গ্রাম অঞ্চলের হাট। হাটের নাম- ‘এক চড়ের বাজার’। নামটি বেশ মজার। তার চেয়ে মজার এর নামকরণের ইতিহাস।

দাদার মুখে শোনা। তখন জন্মও হয়নি রাতুলের। এই হাট তখন পাশের গ্রামে। সে অনেক আগের কথা। দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে তখন রেষারেষি।

একদিন হাটে শুরু হয় তুমুল তর্কাতর্কি । এমন সময় কাজি বাড়ির প্রভাবশালী এক লোক বিরোধী গোষ্ঠীর সরদারের গালে এক চড় দেয়। সরদার চোখে অন্ধকার দেখেন। লোকজন তার চারপাশে জড়ো হয়। ততক্ষনে কাজিরা উধাও।

সেই থেকে কাজিরা এ বাজার বর্জন করে। তারা নিজেদের গ্রামে এক নতুন বাজার গড়ে তোলে। স্থানীয় নাম ছাপিয়ে বাজারটি এখন পরিচিত ‘এক চড়ের বাজার’ নামে। সেখানেই তারা এখন কেনাকাটা করে।

সপ্তাহে একদিন হাট বসে। পুতুল খেলা আর মিষ্টি-মুড়িতে হাট বেশ জমে। নিত্যনতুন জিনিসপত্র ওঠে হাটে। রাতুলের পছন্দ হাওয়াই মিঠাই। বাবা হাওয়াই মিঠাই কিনে সন্ধ্যের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দেয় রাতুলকে।

বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে হাঁটা দেয় রাহুল। বাজার পেরুলেই স্কুলমাঠ। মাঠে ফুটবল খেলা। ফুটবল খেলা দেখার জন্য দাড়িয়ে যায় রাতুল। খেলা দেখতে শুরু করে। দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যে হয়ে গেছে তা খেয়াল করেনি।

মাগরিবের আজান দেয়। সে এখন একলা কি করে বাড়ি ফিরবে। আকাশ কালো হয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে হাটতে শুরু করে রাতুল। কিছু দূর যেতেই দেখা পায় পাশের পাড়ার এক লোকের। মনে মনে ভাবে যাক বাঁচা গেল। কিছুটা নিশ্চিন্ত মনে হাঁটতে শুরু করে রাতুল। 

সামনে একটা মোড়। লোকটি চলে যায় বা দিকে। রাতুল পড়ে মহাবিপদে। বাকি পথটুকু যাবে কেমন করে? দাদির গল্পের কথা মনে পড়ে। রাতুল দাদির কাছে ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প শুনত।গতকাল দাদির কাছে ভুতের গল্প শুনেছিল। ফুটবল খেলা দেখতে না দাঁড়ালে এই সমস্যায় হয়তো পড়তে হতো না। নিজের ওপর রাগ হয় রাতুলের।

সামনে বিশাল বটগাছ। মসজিদের সামনেই গাছটি। এলাকার সবাই জানে। বহু বছর ধরে গাছটিতে বাস করে এক তক্ষক। মাগরিবের আজান হলে তখন সাপটিও বের হয়ে আসে। ভয়ে এটাকে কেউ নাড়তে যায় না। যদিও তক্ষকটি ক্ষতি করে না কারো।

জনশ্রুতি আছে, তক্ষক রেগে গেলে থুথু ছিটায়। সেই থুথু কারো গায়ে লাগলে সেখানে পচন ধরে। তাই সন্ধ্যের পর এ পথে লোক চলাচল কমে যায়। পাশেই বড় বাঁশ বাগান। ভুতুড়ে অন্ধকারে ঢাকা পুরোটা অঞ্চল। কবরস্থানের দিকে এক নজর তাকায় রাতুল। পুরোটাই মনে হয় একটা মৃত্যুপুরী। এই মৃত্যুপুরী থেকে কিভাবে বাঁচাবে নিজেকে? রাতুল মহাচিন্তায় পড়ে।

কিছুক্ষণ আগেই মুসল্লিরা নামাজ শেষ করেছে। সাধারণত এই সময় এতটা অন্ধকার নামে না। কথায় আছে না ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়।’ রাতুলের ক্ষেত্রে তা-ই ঘটে । গত রাতেও সে দাদিমার কাছে ভূতের গল্প শুনেছে।

কী অসহ্য। কোথায় একটু সাহস মেলে তা না, যত ভয়ের কারখানা ঢুকে পড়ছে মাথায়। ভয়ে গা শিউরে ওঠে রাতুলের। কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। 

এক সময় তার মনে হয় সে কাজী বাড়ির ছেলে! কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে নিজেকে প্রশ্ন করে রাতুল- ভয়টা আসলে কিসের? ভূঁতের নাকি তক্ষকের? তক্ষক না হয় সত্য, কিন্তু ভূত? ভূত কি কখনো দেখেছে কেউ? হয়তো দেখেছে কিন্তু সে তো আর দেখেনি। যাকে দেখেনি তাকে এত ভয় কেন তার? আর দাদা তো প্রায়ই বলেন— সাপ নাকি আঘাত না করলে কাউকে ক্ষতি করে না। তাহলে ভয় কিসের? 

একদিন মামা ভয় তাড়ানো বুদ্ধি শিখিয়েছিলেন। রাতুল কি তবে সেই বুদ্ধি কাজে লাগাবে? চমৎকার আইডিয়া! রাতুল তা-ই করবে। সে গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে পেরিয়ে যাবে রাস্তাটুকু। সাহস করে সামনে পা বাড়ায় রাতুল। কিন্তু এ মুহূর্তে কোনো গানও তো মনে পড়ছে না। স্কুলের কত অনুষ্ঠানে সে গান করেছে। অথচ কী আশ্চর্য! কিছুই মনে করতে পারছে না সে।

হঠাৎ খেলার মাঠের মাইকে শোনা গানের একটি লাইন মাথায় আসে তার। পায়ের গতিটা বাড়িয়ে দেয় রাতুল। আর গলা ছেড়ে গান গাইতে শুরু করে।

Check Also

শিক্ষনীয় হাসির গল্প দুলাইভাইর ইউটিউবিং | কমেডি হাসির গল্প

দুলাভাই রসিক মানুষ। সংসারি নয়। আমার মতে তিনি অ্যাকসিডেন্টাল বিয়ের শিকার। যখন যেটা মাথায় আসে, একচোট এক্সপেরিমেন্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *