প্রথম পার্ট পড়ুন: নতুন হাসির গল্প জুতাচোর ধরার অভিযান
বিক্রয়কর্মীর প্রথম বাক্যটিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। দ্বিতীয় বাক্যটি অপমানজনক! তৃতীয় বাক্যটি অতি অপমানজনক! আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
মনে পড়ল দুরন্ত জসিমের কথা। সে-কি এখনো বমি করছে? আবার হাঁটতে শুরু করলাম। খালি পায়ে হাঁটছি। পায়ের নিচে পড়ছে পাথর কিংবা ইটের টুকরো । হাঁটার উদ্দেশ্য দু’টি—দুরন্ত জসিম এবং চোরটাকে খুঁজে বের করা ।
চোরটাকে পাওয়া গেল না। পাওয়া গেল দুরন্ত জসিমকে। মিডিয়া সেন্টারের পাশে বসে ঝিমাচ্ছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ ক্লান্ত। কারণ সে বেশ কয়েকবার বমি করেছে। আমাকে দেখে চমকে উঠল। বললাম- এখন কেমন লাগছে?
ভালো। তবে মাথাটা ব্যথায় টনটন করছে।
তাহলে চলো কফি খাই। কফি খেলে মাথা ব্যথা কমে যাবে।
কফির কথা শুনে সে ওয়াক শব্দ করে বমি করে দিলো।
কারো বমি করা দেখলে আমারও বমি আসে। তাই দ্রুত সরে পড়লাম। হাঁটতে-হাঁটতে চলে এলাম পুলিশ কন্ট্রোল সেন্টারের কাছে। হঠাৎ দেখা হলো দুইশত বিরাশি নং স্টলের সেই বিক্রয়কর্মীর সাথে। যে আমাকে জুতাচোরের ইনফরমার বলেছে। তার পায়ে এখন জুতা নেই। সেও আমার মতো খালি পায়ে হাঁটছে।
পড়ন্ত বিকেল। বইমেলায় বাড়ছে লোকজনের ভিড়। হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। কষ্টের কারণ ধুলো-বালির অত্যাচার। লোকজনের পায়ের আঘাতে উড়ছে ধুলো। ধুলোর নিদারুণ নির্যাতন সহ্য করে মেলায় ঘুরছি। মাঝে মাঝে পায়ের নিচে পড়ছে পাথর কিংবা ইটের টুকরো। ব্যথা পাচ্ছি। তবুও হাঁটছি।
লিটলম্যাগ চত্বরে এসে হাজির হলাম। এখানে কবি ও কাকের আনাগোনা বেশি। হঠাৎ মোবাইল ফোনে কল এলো। ফোন রিসিভ করতেই কবি শিমুল পারভেজের গলার স্বর শুনতে পেলাম।
সে বলল- দোস্ত, কোথায় আছো?
কবি ও কাউয়া চত্বরে আছি।
এটা আবার কোথায়? তোর কথা তো হাসির গল্প এর মতো লাগছে।
বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের পেছনে।
ওটা তো লিটলম্যাগ চত্বর!
ভুল করে লিটলম্যাগ চত্বর নামকরণ হয়েছে।
কেন?
এখানে অসংখ্য কবি ও কাউয়ার উপস্থিতি লক্ষণীয়। গাছের নিচে কবি আর গাছের ডালে কাউয়া। তাই কবি ও কাউয়া চত্বর নামকরণ অধিক যুক্তিযুক্ত।
যুক্তি শুনে কবি কেটে দিলো মোবাইল ফোনের সংযোগ। আবার হাঁটতে লাগলাম। অবশেষে চোরটাকে পেয়ে গেলাম। খপ্ করে শার্টের কলার ধরতেই হকচকিয়ে বলল- আমাকে ছাড়েন! আপনার জুতা আমার কাছে নাই। ওটা পুলিশ নিয়ে গেছে।
পুলিশ নিয়েছে কেন?
বকশিস হিসেবে নিয়েছে।
সোজা হয়ে দাঁড়া।
তাহলে ছাড়েন!
ভয়ের কিছু নেই। তোকে ছেড়ে দেবো। ছাড়ার আগে তোর সাথে কাজ আছে।
কাজের কথা শুনে সে ভয় পেল! বলল- পুলিশের কাছ থেকে আপনার জুতা চুরি করে নিয়ে আসবো?
আরে না! জুতা ফেরত পাবার আশায় তোকে ধরিনি। তোর একটা ইন্টারভিউ নেবো। পত্রিকায় ছাপা হবে ‘জুতাচোরের একান্ত মজার গল্প’ শিরোনামে।
সাক্ষাৎকারের কথা শুনে চোরটা ভয় পেল। কেন ভয় পেল? জানি না! বলল- আমায় ছেড়ে দেন। আপনার জুতা ফেরত দিয়ে যাব। তবু ইন্টারভিউ দিতে পারব না।
তাহলে ছাড়ব না।
না ছাড়লে আমি চিৎকার করব। বলব- আপনি চোর।
ওর কথা শুনে উল্টো ভয় পেলাম। হঠাৎ হাত ফসকে পালিয়ে গেল। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম দুইশত বিরাশি নং স্টলের সামনে। বিক্রয়কর্মীরা বেশ ব্যস্ত । আমার পাশে দাঁড়িয়ে বই কিনছেন পরিপাটি পোশাকের এক ভদ্রলোক। সাথে তাঁর স্ত্রী ।
ভদ্রলোকের সুশ্রী চেহারায় দৃষ্টি পড়তেই চিনে ফেললাম। পুলিশ কন্ট্রোল সেন্টারের সেই কর্মকর্তা। যিনি আমাকে গুলিস্তান যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ডিউটি শেষে স্ত্রীকে নিয়ে এলেন মেলায়।
গায়ে ইউনিফর্ম নেই। আছে উজ্জ্বল নীল রঙের পাঞ্জাবি এবং সাদা পায়জামা। পায়ে সুন্দর ডিজাইনের জুতো। রহস্যময় গোয়েন্দা গল্প শিরোনামের একটা বই দেখছেন।
জুতোর দিকে তাকিয়ে চোখ স্থির হয়ে গেল। চমকে উঠলাম! নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। তিনি স্টলে সাজিয়ে রাখা বইয়ের সারিতে চোখ বুলালেন। এটাতো আমার জুতা জোড়া।