হাসির গল্প জুতাচোর ধরার অভিযান | বাংলা নতুন হাসির গল্প

রহস্যময় গোয়েন্দা গল্প


মেজাজ ভালো নেই। খালি পায়ে বইমেলায় ঘুরছি। মাঝে-মাঝে পায়ের নিচে পড়ছে পাথর কিংবা ইটের টুকরো। ব্যথা পাচ্ছি। তবুও হাঁটছি।

হাঁটার একটা উদ্দেশ্য আছে। একটা চোরকে খুঁজে বের করতে হবে। সে বড়মাপের কোনো চোর না। ছেঁচড়া চোর। কিছুক্ষণ আগে আমার জুতা চুরি করে পলাতক। আমি জুতা চোরকে খুজছি শুনে আসে পাশের অনেকেই হাসছিল।

মেলাসংলগ্ন মসজিদের অযুখানার পাশে চোরটা ঘুরঘুর করছিল। নামাজ শেষে দেখি জুতাজোড়া নেই। দূর থেকে দেখলাম, চোরটা পালিয়ে যাচ্ছে। পায়ে আমারই জুতো। দৌঁড়ে গিয়ে ধরতে ব্যর্থ হলাম। দ্রুত মিশে গেল বইপ্রেমীদের ভিড়ে।

পুলিশের নাকের ডগায় বারবার চুরি হচ্ছে। তাতে তাদের মাথাব্যথা নেই। কেন থাকবে? জুতার নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের না। তাদের দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া।

কয়েক মিনিট পর পর একজোড়া করে জুতা গায়ের হচ্ছে। জুতার মালিক এসে পুলিশকে জানাচ্ছে। পুলিশ বলছে, এখানে খুঁজে লাভ নেই। সোজা গুলিস্তান চলে যান। সন্ধ্যায় ভালো জুতা মিলে যাবে। ভাগ্য সহায় হলে আপনার জুতাই পেয়ে যাবেন।

মেলায় ঘুরতে ঘুরতে বেশ ক্লান্তি লাগছে। এক কাপ কফি খাওয়া দরকার। মেলার একপাশে কফিশপ। আবার হাঁটতে শুরু করলাম। কফিশপের পাশে পেয়ে গেলাম এক বন্ধুকে।

সে হেসে বলল- দোস্ত, খালি পায়ে হাঁটছো কেন?

সকালে খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে বেরিয়েছি।

দোস্ত, এবার আমার লেখা একটা বই বেরিয়েছে।

বইয়ের নাম কি?

বইয়ের নাম ‘ঘুরতে ইচ্ছে করে’। এটি একটি রহস্যময় গোয়েন্দা গল্প।

আজব টাইপের বই। নামের সাথে কোনো মিল নেই। আমি শুধু বিখ্যাত গোয়েন্দা গল্প পড়ি। তোমার কি ঘুরতে ইচ্ছে করে? 

না মানে, আসলে মাঝে মাঝে করে! যখন বউ ঝগড়া করে, তখন !

কি নিয়ে ঝগড়া করে?

বই! বই নিয়ে! বউ বলে, বউ এবং বই একই ঘরে থাকবে না। হয় বইয়ের দিকে নজর দাও, না-হয় বউয়ের দিকে।

কি সিদ্ধান্ত নিয়েছ, ঘরে কি বই থাকবে, না বউ থাকবে?

সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না দোস্ত! এ জন্যই তো কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে। দূরে কোথাও ঘুরতে যাবো। সেখানে বউ থাকবে না।

প্রতিকাপ কফির দাম পঁচিশ টাকা। কেউ দাম জিজ্ঞেস না করে কফির পেয়ালায় চুমুক দিলে পঞ্চাশ টাকা দিতে হয়।

এককাপ কফি নিয়ে আয়েশ করে খাচ্ছি। হঠাৎ কী যেন পড়ল পেয়ালায়। চেয়ে দেখি, কফির উপর কী একটা দ্রব্য ভাসছে! উপরে তাকালাম। গাছের ডালে বসে আছে কালো রঙের একটা কাক। বুঝতে বাকি নেই ঘটনা কি!

এমন সময় পরিচিত এক মিডিয়াকর্মী এলো। নাম দুরন্ত জসিম। হাত থেকে কফির পেয়ালা ছিনিয়ে নিলো দুরন্ত গতিতে।

চুমুক দিতে-দিতে বলল- ভাই, একা-একা কফি খাচ্ছেন, আমাদেরকে তো ডাকতে পারেন।

আরে কি করছো? এই কফি খেয়ো না!

ভাই, আপনি আরেক কাপ কফি নেন।

আরে সে জন্য না! ঐ-যে উপরে তাকাও। গাছের ডালে বসে আছে কাক। একটু আগে ও-খান থেকে সরাসরি ইয়ে… ছেড়েছে কফির কাপে। তুমি সেই কফি পুরোটাই খেয়ে নিলে!

দুরন্ত জসিম বমি করছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না। যে কোনো সময় বমি করে ফেলতে পারি। আবারও ঘুরতে লাগলাম বইমেলার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। খালি পায়ে হাঁটছি। পায়ের নিচে পড়ছে পাথর কিংবা ইটের টুকরো । বেশ ব্যথা পাচ্ছি। তবু হাঁটছি। 

আপনারা হয়তো ভাবছেন, জুতা জোড়া ফেরত পাবার আশায় চোরটাকে খুঁজছি। সেটা সম্ভব নয়। এতক্ষণে হয়তোবা জুতো জোড়া পৌঁছে গেছে গুলিস্তানে। এমনও হতে পারে সেটা কিনে নিয়েছে কোন এক ভদ্রলোক। তারপর সেই জুতো পায়ে দিয়ে প্রেমিকার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে বইমেলায়।

ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেছি দুইশত বিরাশি নং স্টলে। এখানে মানুশ জন কম। বিক্রয়কর্মীরা বসে-বসে ঝিমাচ্ছে। ক্রেতার দেখা নেই । মাঝে-মাঝে দেখা মেলে দু-একটা মাছির । তারা বিক্রয়কর্মীদেরকে বিরক্ত করছে।

স্টলের পাশে এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম, একজন বিক্রয়কর্মীর নাকের ডগায় বসে আছে কালো রঙের একটা মাছি। সে মাছি তাড়াতে-তাড়াতে আমার দিকে তাকাল ।

বলল- কী খুঁজছেন, গল্প না কবিতার বই?

ওসব কিছু না! আমি একটা চোরকে খুঁজছি। ছেঁচড়া চোর ।

ভাই, এখানে বই পাওয়া যায়। চোর পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় না চোরটা এখানে আসবে।

কি করে বুঝলেন?

আপনার জুতোজোড়া দেখেই বুঝেছি! অনেক সুন্দর এবং দামি। জুতো চুরি করতেই চোরটা আসবে।

এসব কি বলছেন! আপনাকে সুবিধার মানুষ মনে হচ্ছে না! আপনি কি জুতাচোরের ইনফরমার?

পরবর্তী পার্ট পড়ুনঃ প্রচন্ড হাসির গল্প জুতাচোর ধরার অভিযান পার্ট ২

Check Also

শিক্ষনীয় হাসির গল্প দুলাইভাইর ইউটিউবিং | কমেডি হাসির গল্প

দুলাভাই রসিক মানুষ। সংসারি নয়। আমার মতে তিনি অ্যাকসিডেন্টাল বিয়ের শিকার। যখন যেটা মাথায় আসে, একচোট এক্সপেরিমেন্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *