প্রথম পার্ট পড়ুনঃ নতুন হাসির গল্প দাদুর চোর ধরা
সে যাই হোক, আমি দূর থেকেই দেখলাম ইটের রাস্তার কাছে তিনজন মানুষ দাঁড়ানো। তাদের মুখ মাফলার দিয়ে ঢাকা। তাই মুখ ভালোমতো দেখা যাচ্ছে না। ওদের হাবভাব দেখে আমার বেশ সন্দেহ হলো।
একটু কাছাকাছি যেতেই একজন বললো- এতো দেরি করলি কেন? রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে যাচ্ছে, আর তুই এখন এলি! কাজ সেরে ভোর হওয়ার আগেই আমাদের এ গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। তাই তারাতারি কাজ করতে হবে। বলেই তিনজন সামনের দিকে পা বাড়লো।
প্রশ্ন শুনে আমি কিছু বলতে গিয়েও থমকে গেলাম । বুঝে গেলাম ওরা চুরি করতে বেরিয়েছে । আমাকে ওরা ওদের দলের লোক ভেবে নিয়েছে। আমিও শীতে কাঁপাকণ্ঠে বললাম, চল, কথা বাড়াস না।
আমাদের তো ট্রেনিংযের শেষ নেই। কী করে শত্রুকে বোকা বানাতে হয়, কী করে খালি হাতে দুই চারজনকে কুপোকাত করতে হয় সবই আমাদের জানা। আমদের সবাইকে এধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয়।
তখন আমার বেশ মজা লাগতে লাগলো। সবাই দ্রুত হাঁটছি, আমি সবার পেছনে। ওরা যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত আমার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আমি ভাবলাম, চোররা সেষ পর্যন্ত আমার বাড়ীতেই চুরি করতে এলো, আমাকে সঙ্গে নিয়ে।
দাদু একথা বলে হেসে দিলেন। তার প্রচন্ড হাসির গল্প শুনে আমাদেরও হাসি পেলো।
দাদু আবারো বলা শুরু করলেন- আমি তখনই একটা কিছু করতে পারতাম কিন্তু কিছুই না করে মনে মনে ভাবছি দেখি না ওরা কী করে।
দলের সরদার লোকটা আমাকে বললো, নিতাই, ঘরের সিঁদ কেটে তুই ঘরে ঢুকবি। তারপর দরজা খুলে দিবি। তারপর যা করা দরকার আমরা করবো।
আমি বুঝতে পারলাম তাদের দলের আরেক লোকের নাম নিতাই। তারা আমাকে নিতাই ভেবেছে। ততক্ষনে খেলা জমে উঠেছে। আর বসে থাকা যায় না। চোরগুলোকে হাতেনাতে ধরার এটাই সময়।
আমিও চোখের পলকে গায়ের চাদরটা খুলে দুই জনের মাথা আর মুখ ঢেকে জাপটে ধরলাম। ধরেই চিৎকার শুরু করলাম, কে কোথায় আছো জলদি এসো, হাতেনাতে চোর পাকড়াও করেছি।
আমার ব্যবহারে প্রথমে ওরা অবাক হলেও পরে ঠিকই ওরা তাদের ভুল বুঝতে পারলো। আর তখনই চোরগুলো পালাবার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু এর মধ্যে পাড়ার লোকজন এসে ঘিরে ফেলেছে তাদেরকে।
আমি বললাম, আমি রোকন। তোমরা এই দুই জনকে ধরো। আর একজন কোথায় পালালো খুঁজে দেখো। শেষ পর্যন্ত তিনজন চোরই ধরা পড়লো ।
তখনই কেউ গেলো থানায়, কেউ এলো চোরদের লাঠিপেটা করতে। এতো হইচইয়ের মধ্যে কখন যে ভোর হয়ে গেছে বুঝতেও পারিনি। চারপাশে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে। চোররা আমাকে দেখে মাফ চাওয়া শুরু করল।
আমি বললাম- তোরা তো সবাই যুবক মানুষ, সৎপথে পরিশ্রম করে খেতে পারিস । চুরি করতে এলি কেন?
তারা বলতে লাগল- আর কখনো আমরা চুরি করবো না। ভিক্ষাও করবো না। আমরা সৎপথে পরিশ্রম করে খাবো ।
আমি আর ওদের মারপিট করতে দিলাম না। সবাইকে থামালাম। এমন সময় থানা থেকে পুলিশ দারোগা এসে হাজির। সঙ্গে আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্য। আমি ওসি সাহেবকে বললাম, এদের দলে আর একজন আছে তার নাম নিতাই ৷ তারপর উপস্থিত লোকজনের সামনে বর্ণনা করলাম রাতের ঘটনা। শেষে তিনি চোরদেরকে থানায় নিয়ে গেলেন।
পরদিন চার দোকানে আমি আর ওসি সাহেব আড্ডা দিচ্ছিলাম। চা খেতে খেতে ওসি সাহেব বললেন- স্যার এই ঘটনাটা যদি আপনার বাড়িতে না ঘটে অন্য কোনো গ্রামে ঘটতো তাহলে আপনাকে বিশ্বাস করা দূরে থাক, গ্রামের লোকজন আপনাকেই চোরের সরদার বলে ধরে নিতো।
ওসি সাহেবের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো সবাই। আমিও হাসতে হাসতে বললাম, তা ঠিকই বলেছেন ।