রিলেশনের কষ্টের গল্প বড় ছেলে পার্ট ২ | ছেলেদের কষ্টের গল্প

প্রথম পার্ট পড়ুনঃ মধ্যবিত্ত ছেলেদের কষ্টের গল্প বড় ছেলে

মধ্যবিত্ত ছেলেদের কষ্টের গল্প


জমির চাচার দোকানে গিয়ে বাকি টাকাগুলো পরিশোধ করলাম। দশ কেজি চাল কিনে বাড়ি এলাম। বাবার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললাম- টাকাগুলো ধরো। বাজারে গিয়ে মাছ-তরকারি কিনে আনো।

তোর কাছে টাকা আছে তো? গাড়ির ভাড়া!- বাবার সচেতন প্রশ্ন। 

বললাম- তুমি একদম চিন্তা করো না। আর এই অবস্থা আমাকে কেনো জানাওনি? 

বাবা বললেন- তোকেই তো পড়ার খরচ দিতে পারিনা কতদিন! সংসারের ঝামেলাটা আবার কেন তোর ওপর দেবো!

তুমি একদম ভাববা না। চারটে টিউশনি করছি। সামনের মাসে একটা কোচিংয়ে ক্লাস নেয়া শুরু করব। কোনো সমস্যা হবে না। আমি ভার্সিটি গিয়ে আরও কিছু টাকা পাঠিয়ে দেবো। ওদের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, শুধু সেদিকে একটু খেয়াল রেখো।

কথাগুলো শোনার পর বাবার চোখেমুখে এক ধরনের ভারমুক্তির চিহ্ন খুঁজে পেলাম। আমি আমার বাবাকে খুব ভালো করে চিনি- আত্মপ্রত্যয়ী, পরিশ্রমী, স্বাধীনচেতা, সচেতন একজন বাবা হিসেবে। ছোটবেলা থেকে আমাদের কোনো আবদার অপূর্ণ থাকেনি। ব্যবসায় অনেকগুলো টাকা লোক্সান হওয়ায় তিনি এখন অসহায়।

বড় ছেলে হিসেবে বাবার পাশে থাকা, ছোট ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ চালানো আমার একমাত্র দায়িত্ব এখন। গত একবছর বাবার কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। টিউশনি করেই চলতে হয়। সেখান থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে বাড়ির জন্যও পাঠাতে হয়।

এই মুহূর্তে স্বার্থপরের মতো আমার ভালো লাগা আর ভালোবাসাকে প্রশ্রয় দিয়ে পরিবারের কথা বেমালুম ভুলতে পারি না। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলেদের ছোট ছোট ভালো লাগাকে বিসর্জন দিতে হয়।

ঐশী মাথা নিচু করে বসে আছে। আমিও নিশ্চুপ। কী বলব, আর কী-ই বা বলা উচিত ভাবতে পারছি না। বড় করে নিঃশ্বাস নিলাম। ঐশীর দিকে না তাকিয়েই কথা বলা শুরু করলাম,

ঐশী, তুমি তো জানো, আমি বাড়ির বড় ছেলে। আমার আরও তিন ভাই-বোন আছে। বাবার ব্যবসাটা বন্ধ। মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হতে চলেছে। টিউশনি করে নিজের খরচ চালাচ্ছি। টিউশনির টাকা থেকে প্রতি মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। চাকরিতে ঢুকলেও বিয়ে করতে চার-পাঁচ বছর লেগে যাবে। তার আগে বিয়ে করা আমার পক্ষে একদম অসম্ভব। তারচে বরং তোমার বাবার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে করে সংসারী হও।

এটাই কি তোমার শেষ কথা!- কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঐশীর বিস্ময়কর প্রশ্ন।

এই মুহূর্তে আমার আর কিছু বলার নেই ঐশী। তোমার জন্য সবসময় দোয়া থাকবে। ভালো থেকো।

হঠাৎ ফুঁপিয়ে ওঠার আওয়াজ শুনতে পেলাম। মুহূর্তে আমার অনুর্বর মস্তিষ্ক বহু বছর আগের ধারণকৃত স্মৃতিগুলো দৃশ্যমান করে তুলল। আমাদের ভালোবাসার কষ্টের গল্প আমার মনে পরে গেল।

ঐশী একটা ছোট্ট ছেলেকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা যখন আম্মু বলে ডাকল, তখন নিশ্চিত হলাম ছেলেটি ঐশীরই, যেমনটি ভেবেছিলাম। আরও একটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। চোখে চোখ পড়ল।

প্রথমবার সেও কিছুটা অবাক হলো বুঝলাম। নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও একবার তাকাল আমার দিকে। আমিও তাকিয়ে থাকলাম। খুব সহজে নিজেকে সামলে নিল। কত কিছু মনে হতে লাগল। একবার তো খুব ইচ্ছে হলো, সামনে গিয়ে দাঁড়াই। কেমন আছে জিজ্ঞেস করি। কিছুই বলতে পারলাম না।

এরই মাঝে একজন পূর্ণ বয়স্ক ভদ্রবেশী লোককে তার কাছে আসতে দেখলাম। টিকিট হাতে বলতে শুনলাম, একটু পরেই ট্রেন আসবে। তৈরি থাকো।

লোকটার প্রতি কেন যেন রাগ হতে লাগল। মনে হলো কিছুই করতে পারিনি।

ট্রেন এসে গেল। লোকটার ডান হাতে লাগেজ আর বাম হাতে ঐশীর ডান হাত। ঐশী তার ছোট্ট ছেলেটাকে বাম হাতে শক্ত করে ধরে সামনে চলে গেল আসন খুঁজতে।

কী এক অজানা আকর্ষণে আমিও পেছন পেছন হাঁটতে লাগলাম। বেশি দূর এগোতে পারলাম না। দাঁড়িয়ে গেলাম অনধিকার চর্চার আশঙ্কায়। ট্রেন ছাড়ার হুইশেল বেজে উঠল। ধীরে ধীরে ট্রেন চলতে শুরু করল।

তখনও প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে ক্রস করে ঐশীদের বগিটা চলে গেল। অন্যদিনের মতো পেছন থেকে ট্রেনের চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে লাগলাম। ট্রেন ছুটে চলেছে তার আপন গন্তব্যে।

ট্রেন চলে যাওয়ার পর একটু আগের সেই জনাকীর্ণ রেলস্টেশন জনমানবহীন শূন্যের মাঝারে পরিণত হয়। বিরান এই প্ল্যাটফর্মের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি নিঃসঙ্গতাকে বুকে নিয়ে নতুন কোনো ট্রেনের আশায়।

Check Also

ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প | সাহসী বালক পার্ট ৩

প্রথম পার্ট: ছোটদের রূপকথার গল্প সাহসী বালক দ্বিতীয় পার্ট: ছোটদের কাল্পনিক গল্প সাহসী বালক পার্ট ২ তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *