প্রথম পার্ট পড়ুনঃ কমেডি হাসির গল্প পুরোনো বন্ধু
মাসুদ এতক্ষণ ফোনালাপ শুনছিল । এবার মোবাইল সেটটা এগিয়ে দেন মহিলা।
নিন, মার সাথে কথা বলুন।
ত্রিশ বছর পর ক্লাসমেটের সাথে কথা বলবে। গলাটা ঝেড়ে কেশে নেয় মাসুদ।
হ্যালো, আমি মাসুদ বলছি। বাড্ডা হাইস্কুলের সেই মাসুদ, ফারুকের কথা মনে আছে?
দাঁড়াও, দাঁড়াও মাসুদ। তোমার সাথে অনেক কথা আছে। নাম্বারটা সেভ করে রাখ। বাড়ি গিয়ে এই নাম্বারে কল দিও। বাস থেকে নেমেতো দুই জন দুই দিকে চলে যাবে। এত কথা বলার সময় পাবে না।
তুমি বলতে থাক। যথেষ্ট সময় আছে। কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসেছি দেড় ঘণ্টায় । সায়েদাবাদ থেকে বাড্ডা যেতে লাগবে দুই ঘণ্টা। ঢাকা শহরের যানজট সম্পর্কে তোমার কোন আইডিয়া নেই। কী এমন কথা? বলতে অনেক সময় লাগবে?
নয় বছর এক সাথে পড়েছি, খেলেছি। ত্রিশ বছর পর দেখা। সময় লাগবে না?
দেখা! মোবাইলেতো ছবি নেই। দেখা হলো কই? শুধু শোনা হলো।
ঐ হলো। দেখা আর শোনা একই কথা। আচ্ছা, শাহাবুদ্দিন স্যারের কথা মনে আছে?
থাকবে না আবার? সাইজে লম্বা ছিল। বলে আমরা আড়ালে লাম্বু স্যার বলতাম।
ঐ সব নিয়ে এখন কথা না বলাই ভালো। তিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন ।
মরে গেলেই সব শেষ হয় না। কিছু মানুষের কৃতকর্মের ফল অন্যকে সারা জীবন ভুগতে হয়। তুমিতো স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিলে। ওয়ান থেকে নাইন পর্যন্ত সব ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছো। শুধু নাইন থেকে টেনে ওঠার সময় বার্ষিক পরীক্ষার থার্ড হলে । ফার্স্ট হলো ফারুক, আমি সেকেন্ড আর তুমি থার্ড। তুমি খুব কেঁদেছিলে রেজাল্ট দেখে ।
তাতে আমার কিছু হয়নি। বোর্ডে ঠিকই ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছি। স্কলারশিপ নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি । তোমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর ক্ষতিটা করেছিলাম আমি। তোমার কি মনে আছে, একদিন আমি ক্লাসে একটা আন-কমন ইংলিশ রচনা মুখস্থ করছিলাম। তুমি বলেছিলে, এটাতো পরীক্ষায় আসবে না। খামাখা কষ্ট করছি। আমি বাজি ধরেছিলাম, এটাই পরীক্ষায় আসবে বলে। পরীক্ষায় ঐ আন-কমন রচনাটাই এসেছিল, জার্নি বাই বাস । তোমার কি একটুও সন্দেহ হয়নি, কিসের জোরে আমি বাজি ধরেছিলাম? –
আমি সরল সোজা মানুষ । অত কিছু ভাবিনি ।
কিন্তু আমি এখনো ভাবছি। তুমি আজও জান না, ঐ লাম্বু স্যার পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগেই আমাকে পাঁচ বিষয়ের প্রশ্ন দিয়েছিলেন। আর ঐ ফারুক। টিফিন পিরিয়ডে আমাদের ও স্যারদের দামি দামি নাশতা খাওয়াতো। মোটা টাকা দিয়ে লাম্বু স্যারের মাধ্যমে এক সেট প্রশ্ন সেও পেয়েছিল। চেয়ারম্যানের ছেলে বলে কথা। পরীক্ষায় ফার্স্ট হলো। তোমার জায়গাটা দখল করে নিলো। কেউ টেরই পেল না।
তাতে আমার কোনো ক্ষতি হয়নি ।
স্কুলে ফার্স্ট হয়েছে। কিন্তু বোর্ডে কোনো রকম পাস করে প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হয়েছিল। আর এগোতে পারেনি। মেয়েটা এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে ফোনালাপ শোনছিল। এবার সেটটা টান দিয়ে মেয়ে হাতে নেয় ।
স্কুল লাইফের কাহিনী চর্চা করতে করতে চার্জ শেষ। যথেষ্ট হয়েছে। আর দরকার নেই।
ঠিক আছে। বাড্ডা এসে গেছি। এখনি নামতে হবে। আপনার মায়ের সাথে বকবক করতে করতেই জার্নি শেষ। আপনার সাথে কথা বলাই হলো না। আপনি কেন ঢাকায় এসেছেন?
আমি এইচএসসি ক্যান্ডিডেট। কাল থেকে পরীক্ষা শুরু। গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি, ঢাকায় কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্ন বের হয়েছে। এক সেট প্রশ্ন কিনবো।
এখনি মতলবে ফিরে যান। নইলে আপনাকে পুলিশে দেবো। প্রশ্নফাঁস চক্রের সাথে জড়িত সন্দেহ মামলা করবো ।
কেন? আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি ? আমি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে আপনার সমস্যা কী? আমার সাথে শত্রুতা করছেন কেন? মায়ের ছোটকালের বন্ধু মনে করে গোপন তথ্যটা আপনার কাছে ফাঁস করলাম। আর আপনি আমার বারোটা বাজালেন ।
বারোটা বাজাইনি। আপনার ভালো করেছি। বাড়িতে যান ভালোভাবে প্রিপারেশন নেন। এমনিতেই ভালো রেজাল্ট করবেন। আপনার মায়ের প্রতিশোধ নিচ্ছি। কোনো কথা না বলে মতলবে ফিরে যান।