ভালোবাসার কষ্টের গল্প বড় ছেলে | মধ্যবিত্ত ছেলেদের কষ্টের গল্প


রিলেশনের কষ্টের গল্প


পাংশা রেলস্টেশনের মজিদ চাচার দোকানের চা আমার খুব বেশি পছন্দের। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার আগে একটু বাইরে থেকে ঘুরে যাই। বাইরে এলে চাচার দোকানে গিয়ে বসি।

একই টাইমে প্রতিদিন মধুমতি ট্রেন ছাড়ে। চা শেষ করে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দাঁড়াই। ট্রেন ছাড়ার বাঁশি বাজে। ট্রেন চলে যায় তার গন্তব্যের দিকে। ট্রেনের এই চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে। কত মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে করে ঘুরে বেড়ায়।

মজিদ চাচার দোকানে আজ টেলিভিশন দেখলাম। খুব অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, চাচা, দোকানে হঠাৎ টেলিভিশন!

তিনি জবাব দিলেন- স্যার, আপনে তো জানেন, দোকানে টেলিভিশন না থাকে এখন আর লোকজন তেমন আসে না। আশপাশের সব দোকানেই এখন টেলিভিশন আছে। তাই ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে টেলিভিশনটা কিনেছি।

চাচার চোখেমুখে এক ধরনের আশা খুঁজে পেলাম।

আপনার তো কলেজ বন্ধ। আজকে আপনি আমার দোকানে একটু বেশি সময় থেকে যান। বসে টেলিভিশন দেখেন।

কলেজে শিক্ষকতা করি বলে সবার মতো সেও আমাকে স্যার বলে ডাকে। মজিদ চাচার অনুরোধটা ফেলতে পারলাম না। চা খাচ্ছি আর টিভি দেখছি।

প্রায় রাতেই দোকান বন্ধ হওয়ার আগে মজিদ চাচার দোকানে এসে বসি। তখন কেউ থাকে না। একা একা চাচার সাথে গল্প করি। তার শৈশব-কৈশোরের গল্প শুনি। আমি যে টুকটাক লেখালেখি করি তা অনেকের মতো তিনিও জানেন। চাচার খুব ইচ্ছে তাকে নিয়ে যেন একটা গল্প লিখি। তার সঙ্গটা আমার একেবারে খারাপ লাগে না। তিনি আমার কাছে এখন কোনো সাধারণ চায়ের দোকানদার নন।


আমার ব্যক্তিগত বিষয়েও খোঁজখবর রাখেন। মাঝে মধ্যেই বলেন- স্যার, আর দেরি কইরেন না। বিয়েটা এবার করে ফেলেন। অভিভাবকের মতো জীবন সম্পর্কে পরামর্শ দেন। কৃত্রিম হাসির রেখা টেনে বিদায় নিতে হয়।

টিভি দেখছি সবার মতো আমিও। নাটক শুরু হলো। ‘বড় ছেলে’- নামটা খুব আকর্ষনীয় মনে হলো। আগ্রহ ভরে পুরো নাটক দেখা শেষ করলাম। নাটকের প্রতিটি দৃশ্যে কেনো যেন নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। ভাবনার নদীতে অবগাহন হলো আমার।

নাটক দেখা শেষে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দাঁড়ালাম অন্যদিনের মতো। হঠাৎ চোখ আটকে গেল। অচেনা মানুষগুলোর ভিড়ে একজনকে খুব বেশি চেনা মনে হলো। ভালো করে দেখলাম- ঐশী। এক দশক আগে যাকে শেষবারের মতো দেখেছিলাম! ঐশীর সাথে এভাবে দেখা হবে ভুলেও ভাবিনি কোনোদিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ ক্লাসের আগের দিন, শহিদ মিনারে শেষ দেখা হয়েছিল তার সাথে। আহসান স্যারের ক্লানের জন্য অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণ পর জানলাম, স্যার আজ ক্লাস নেবেন না। ভাবলাম শহিদ মিনারে গিয়ে বসি। এমন সময় ঐশীর ফোন,


কোথায় তুমি?

এই তো ক্লাসরুমে । ক্লাস হবে?

 না।

শহিদ মিনারের দিকে আসতে পারবে?

হুম। এখনই আসছি।

শহিদ মিনারের বেদীতে বসে আছে ঐশী। ডানপাশে ব্যাগ রাখা। তার বামপাশে গিয়ে বসলাম।

সে বলল- কী ভাবলে ?

কোন ব্যাপারে?

কোন ব্যাপারে মানে! পরশু দিন রাতের কথা একদম ভুলে গেলে!

ও আচ্ছা।

ও আচ্ছা মানে! তোমরা ছেলেরা না…

ব্যাপারটা কতবার ভেবেছি, তা ঐশীকে কীভাবে বলি! এই মুহূর্তে আমার কী করার আছে, তা ভেবে পাচ্ছি না! কিভাবে বলি তাকে পরিবারের বড় ছেলেদের কষ্টের গল্প।


চার ভাই-বোনের সবার বড় আমি। ছোটভাই কলেজে, বোন একটা হাইস্কুলে পড়ে। ছোটবোনটা সবেমাত্র স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার ব্যবসার অবস্থা একদম ভালো নেই। মূলধনের সবটুকু এখন বাকি পড়ে গেছে। টাকাগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। বাবার সাথে কথা বলে সেটাই জানতে পারি।

আমার জীবন অন্যান্য মধ্যবিত্ত ছেলেদের কষ্টের গল্প এর মতোই। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। বাবার পক্ষে সংসারের ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

গতমাসে বাড়ি গিয়ে জানতে পারি, কয়েক দিন ধরে বাড়িতে রান্না হয় না। বাড়িতে কোনো চাল নেই। দোকানেও বেশ কিছু টাকা বাকি পড়ে গেছে। বাকি টাকা পরিশোধ করার কথা রাখতে না পেরে বাবা দোকানে যেতে পারেননি।

চাচি কয়েক দিন ধরে রান্না করে মার কাছে দিয়ে যান। কথাগুলো জানতে পারি বাড়ি যাওয়ার পর। ছোটবোনটা অগোছালো বাক্যে সব বলতে থাকে। আমাকে দেখে যেন আবদার করার বড় আশ্রয় খুঁজে পায় সে। প্রতিদিন পাঁচ টাকার আবদারটা বাবার পক্ষে মেটানো সম্ভব হলেও আমার ছোটবোনটাও যেন পরিবারের এই মুহূর্তের অবস্থাটা বেশ আমলে নিয়েছে।



দ্বিতীয় পার্ট পড়ুনঃ রিলেশনের কষ্টের গল্প বড় ছেলে পার্ট ২

Check Also

ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প | সাহসী বালক পার্ট ৩

প্রথম পার্ট: ছোটদের রূপকথার গল্প সাহসী বালক দ্বিতীয় পার্ট: ছোটদের কাল্পনিক গল্প সাহসী বালক পার্ট ২ তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *